১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রবাস

প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করেও লিবিয়ায় বন্দি আসলামকে ফেরাতে পারেনি পরিবার

প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করেও লিবিয়ায় বন্দি আসলামকে ফেরাতে পারেনি পরিবার

অভাবের সংসারে একটু স্বস্তি ফেরানোর স্বপ্ন ছিল মাদারীপুরের যুবক আসলামের। পরিবারকে সুখ-সমৃদ্ধি দিতে দূর দেশে যাওয়ার ইচ্ছে থেকেই তিনি ভরসা করেছিলেন দালালের কথায়। লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছানোর আশাই ছিল তার স্বপ্নপথ। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন পরিণত হয়েছে নির্মম দুঃস্বপ্নে। প্রায় দুই বছর ধরে লিবিয়ার কারাগারে বন্দি আসলাম। তাকে মুক্ত করতে পরিবার দফায় দফায় ৪৮ লাখ টাকা দিলেও, ঘরে ফেরা হয়নি এখনও।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের হুগলী এলাকার মানবপাচারকারী দালাল জামাল প্রামাণিকের হাতে এই বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে দিয়েও কোনো ফল হয়নি। উল্টো ছেলের মুক্তির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসহায় বাবা-মা।

সর্বশেষ আরও টাকা দাবি করলে বাধ্য হয়ে দালালের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন আসলামের মা আসমা আক্তার।

এদিকে, দালাল জামাল প্রামাণিক ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পরিবারটি। তারা দালালকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন এবং প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন সন্তানের মুক্তির জন্য।

আসলাম ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া এলাকার দিনমজুর আব্দুল হালিম চৌকিদারের ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার বড়। দেশে থাকতে দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি।

পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দালাল জামাল প্রামাণিক আসলামের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকায় ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখান। ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি জামালের মাধ্যমেই আসলাম লিবিয়ায় পৌঁছানকিন্তু এরপর শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতনতাকে মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, এবং মুক্তির নামে দফায় দফায় আদায় করা হয় মোট ৪৮ লাখ টাকা।

এই টাকা তুলতে গিয়ে পরিবারটি জমি বিক্রি ও ধার-দেনা করে সর্বস্ব হারিয়েছে। এখন সেই ধার শোধ করতে না পেরে পাওনাদারদের চাপের মুখে দিন কাটছে তাদের। এত টাকা দেওয়ার পরও জামাল আবারও নতুন করে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এতে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে আসলামের মা আসমা আক্তার আদালতে চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

আসলামের মা আসমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে বলেন, জমি বিক্রি আর ধার করে ৪৮ লাখ টাকা দিয়েছি ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য। দালাল জামাল দুই বছর ধরে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় রেখে অমানুষিক নির্যাতন করছে। এখন আবার নতুন করে টাকা চাইছে, না দিলে ভয় দেখায়। সরকারের কাছে অনুরোধ, দালালের বিচার চাই এবং আমার ছেলেকে যেন জীবিত ফিরে পাই।

গতকাল পরিবারটি জামালের বাড়িতে গেলে দেখতে পায়, সে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে জামাল প্রামাণিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কোনো টাকা নেই নাই, টাকা নিয়েছে মামুন নামের এক ছেলে, তার বাড়ি আলগী গ্রামে। তবে পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে বললেও বিস্তারিত কিছু জানাননি। উল্টো সাংবাদিকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায়ে ফোন কেটে দেন।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে, আমরা তদন্ত করছি। এখন পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, প্রতিটির ক্ষেত্রেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেবিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি