২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইউরোপের দেশ পর্তুগালসহ যেসব দেশে বিয়ে করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব

প্রেম কিংবা বিয়ে; এখন আর তা কেবল নিজের দেশের সীমানায় আটকে নেই। ভালোবাসা মানুষকে টেনে নেয় সীমান্তের ওপারেও। অনেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন বিদেশিকে, আবার কারও কারও কাছে বিয়ের মাধ্যমেই খুলে যায় নতুন দেশে বৈধভাবে বসবাস ও নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব মেলে? উত্তর হলো—হ্যাঁ, মেলে।

সম্প্রতি ১০ জুন জীবনযাপন সেকশনে প্রকাশিত হয়েছিল ‘বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব পাবেন যেসব দেশের’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ জানুন আরও কিছু দেশ সম্পর্কে, যেখানে বিয়ের পর সহজেই মিলতে পারে নাগরিকত্বের দ্বার।

তাহলে চলুন জেনে নেই কোন দেশগুলোতে বিয়ে করলেই মিলবে নাগরিকত্ব।

১। ব্রাজিল

বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার দিক থেকে ব্রাজিল বিশ্বের সবচেয়ে উদার দেশগুলোর একটি। পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ ও দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল। বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার দিক থেকে ব্রাজিল বিশ্বের সবচেয়ে উদার দেশগুলোর একটি। যদি আপনি একজন ব্রাজিলের নাগরিককে বিয়ে করেন এবং সেখানে তাঁর সঙ্গে টানা এক বছর বসবাস করেন, তবেই আপনি সেখানে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া ব্রাজিলে রয়েছে দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি। অর্থাৎ ব্রাজিলের নাগরিক হতে গেলে আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে না। ব্রাজিলের নাগরিক হলে আপনি পাবেন রাশিয়াসহ অনেক দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগও।

২। পর্তুগাল

পর্তুগালে বিয়ের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন নাগরিকত্ব।এই দেশেও বিয়ের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন নাগরিকত্ব। এর জন্য আপনি যদি কোনো পর্তুগিজ নাগরিকের সঙ্গে তিন বছর ধরে বিবাহিত সম্পর্কে থাকেন, তাহলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এতে আপনার পর্তুগালে থাকারও প্রয়োজন নেই। পর্তুগিজ ভাষা ও সংস্কৃতির জানা এ ক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি সুযোগ দিতে পারে। পর্তুগাল যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ, তাই এর নাগরিকত্ব পেলে আপনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুবিধাও পাবেন।

৩। পোল্যান্ড
নাগরিকত্বের জন্য পোল্যান্ডের ভাষা পরীক্ষাও পাস করতে হয়। পোল্যান্ডের নাগরিককে বিয়ে করলে বিয়ের তিন বছর পর এবং পোল্যান্ডে টানা দুই বছর থাকার পর নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে। তবে এখানে জানা থাকতে হবে পোলিশ ভাষা। কারণ, নাগরিকত্বের জন্য পোল্যান্ডের ভাষা পরীক্ষাও পাস করতে হয়। থাকার জন্য অন্যতম সুন্দর দেশ হলেও পোল্যান্ড হতে পারে কিছুটা ব্যয়বহুল। কারণ, এখানে থাকতে আপনাকে গুনতে হতে পারে উচ্চ হারে আয়কর। পোল্যান্ডে আয়কর ১৮–৩২ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৪। সার্বিয়া

সার্বিয়ার নাগরিকত্ব পেলে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে যাওয়া সহজ হয়। সার্বিয়ায় বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেতে হলে দেশটির বৈধ নাগরিকের সঙ্গে থাকতে হবে তিন বছরের বিবাহিত সম্পর্ক। এর পাশাপাশি সার্বিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। তবে অনেক সময় নিয়মগুলো খুব কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না, তাই সহজেই পেয়ে যেতে পারেন সার্বিয়ার পাসপোর্ট। দেশটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। জীবনযাপন খরচও তুলনামূলক কম। এ ছাড়া সার্বিয়ার নাগরিকত্ব পেলে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে যাওয়া সহজ হয়।

৫। ফ্রান্স

ফ্রান্সের নাগরিকও হতে পারেন আপনি, যদি বিয়ে করেন কোনো ফরাসি নাগরিককে। ফ্রান্সের নাগরিকও হতে পারেন আপনি, যদি বিয়ে করেন কোনো ফরাসি নাগরিককে। এর জন্য সময়সীমা চার বছর। অর্থাৎ ফরাসি নাগরিককে বিয়ে করে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আপনাকে চার বছর তাঁর সঙ্গে থাকতে হবে এবং ফ্রান্সেই বসবাস করতে হবে। আপনি যদি ফরাসি নাগরিককে ফ্রান্সের বাইরে বিয়ে করেন, তাহলে এই চার বছরের সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। একবার ফ্রান্সের নাগরিক হলে আপনি পাবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুবিধা। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ হওয়ায় এখানে ট্যাক্সের হার খুবই বেশি, যা প্রভাব ফেলতে পারে জীবনযাপনে।

৬। ইতালি

ইতালিও বিয়ে সূত্রে নাগরিকত্ব দেয়। ইতালির সুস্বাদু পিৎজা, পাস্তা, লাজানিয়া, তিরামিসু কেকের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনিন্দ্যসুন্দর দেশটি পারিবারিক সংস্কৃতি ও ভ্রাতৃত্ববোধেরও এক সুন্দর উদাহরণ, যেখানে পরিবারের সবাই মিলেমিশে থাকে। ইতালিও বিয়ে সূত্রে নাগরিকত্ব দেয়। ইতালির নাগরিককে বিয়ে করলে এবং দেশটিতে দুই বছর বসবাস করলে আবেদন করতে পারবেন নাগরিকত্বের। তবে ইতালিতে না থেকে অন্য দেশে থাকলে তিন বছর পর আবেদন করা যাবে। যদি দম্পতির সন্তান থাকে তবে এই সময়সীমা অর্ধেক কমে যায়। আশার কথা হচ্ছে, ইতালির নাগরিকত্বের পাশাপাশি আপনি পেয়ে যাবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুবিধা।

তবে বিয়ের আগে আপনাকে যেটা অবশ্যই জানতে হবে : 

বিয়ে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সত্যিকারের ভালোবাসার বন্ধনে যদি কেউ বিদেশি জীবনসঙ্গীকে বেছে নেন এবং সেই সম্পর্ক নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগও এনে দেয়, তবে তা নিঃসন্দেহে হতে পারে এক অতিরিক্ত সুবিধা। তবে মনে রাখা জরুরি—শুধু নাগরিকত্বের জন্য গড়ে ওঠা সম্পর্ক কখনোই প্রকৃত সুখ এনে দিতে পারে না; বরং ভালোবাসাহীন সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কাগজেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।

সূত্র: নোম্যাড ক্যাপিটালিস্ট