১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগীতে রুনা লায়লার ছয় দশক

বাংলা সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলা সংগীতকে তিনি নিয়ে গিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। গতকাল ছিল রুনা লায়লার ৭৩ তম জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশ পেয়েছে তাকে নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মায়ার সিংহাসন’।

উপন্যাসটিতে বাংলাদেশের জনসংস্কৃতিতে রুনা লায়লার আবির্ভাব, সংগ্রাম ও কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প উঠে আসবে লেখক আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির লেখনীর মাধ্যমে।

সংগীত জীবনে রুনা লায়লা ছয় দশক পূর্ণ করলেন। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে সংগীতাঙ্গনে সুরের জাদু দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে আসছেন তিনি।

নন্দিত শিল্পী রুনা লায়লা :

মাত্র ছয় বছর বয়সে সংগীত শুরু করেন তিনি। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজিসহ মোট ১৮টি ভাষায় গান গেয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজের অবস্থানকে সদৃঢ় করেছেন এ সংগীতশিল্পী ।

১৯৬৪ সালে লায়লা উর্দু ভাষার ‘জুগনু’ চলচ্চিত্রে ‘গুড়িয়াসি মুন্নি মেরন’ গান দিয়ে সংগীতাঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন।

এরপর ১৯৭৪ সালে কলকাতায় ‘সাধের লাউ’ রেকর্ড করেন। ৩ দিনের মধ্যে ৩০টি গান রেকর্ড করে লায়লার নাম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠে ।

‘এক সে বাড়কার এক’ চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানে রেকর্ডিং এর সময় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকারের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক গড়ে ওঠে। ‘ও মেরা বাবু চেল চাবিলা’ ও ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ গান দিয়ে ভারত জুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

‘দমা দম মাস্ত কালান্দার’আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক পরিচিতি পায়। নতুন করে গানটি তিনি গেয়েছেন কোক স্টুডিও বাংলার জন্য।

১৯৮২ সালে, বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে তার কণ্ঠে পপ অ্যালবাম ‘সুপারুনা’ প্রকাশের প্রথম দিনেই ১ লক্ষেরও বেশি কপি বিক্রি হওয়ায় তিনি গোল্ডেন ডিস্ক পুরস্কার অর্জন করেন।

সুরের রানী রুনা লায়লা :

এই পর্যন্ত তিনি ১০,০০০ এর মতো গান গেয়েছেন। কনসার্ট করেছেন ম্যাডিসন স্কয়ার, সিডনি অপেরা হাউজসহ যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, জাপান, রাশিয়া, সুইডেনসহ এমন সব জায়গায় যেখানে পৌঁছানোর শুধু স্বপ্নই দেখেন অনেক সংগীতশিল্পী।

রুনা লায়লা তার বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।

তিনি শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ৭ বার এবং ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। স্বাধীনতা পুরস্কার সহ ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক, লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০২৫), বাইফা আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, শেলটেক অ্যাওয়ার্ড, লাক্স-চ্যানেল আই লাইফটাইম পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ মিউজিক আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০২০)।

পাকিস্তান থেকে প্রাপ্ত পুরস্কার নিগার অ্যাওয়ার্ড (১৯৬৮, ১৯৭০), সমালোচক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি । ভারত থেকে সায়গল পুরস্কার, রেডিও মির্চি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড(২০১৫),গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন রুনা লায়লা।

হাজারো গান গেয়েছেন রুনা লায়লা। প্রতিটি গানের সাথে মিশে আছে এক ধরণের আবেগ-ভালোবাসা।