২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মুসলিম বিশ্ব

শরিয়াহ ও রাষ্ট্রবিরোধী বই নিষিদ্ধ করেছে আফগান সরকার; তালিকায় রয়েছে মওদুদী ও ইউসুফ কারজাভী

শরিয়াহ ও রাষ্ট্রবিরোধী বই নিষিদ্ধ করেছে আফগান সরকার; তালিকায় রয়েছে মওদুদী ও ইউসুফ কারজাভী

আফগানিস্তানের তালেবানের নেতৃত্বাধীন সরকার নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করেছে, সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও, বাস্তবে বিষয়টি ভিন্ন।

দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, নিষিদ্ধ হয়েছে শরিয়াহ ও রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থি মোট ৬৭৯টি বই। এর মধ্যে নারী লেখকদের প্রায় ১৪০টি বই থাকলেও, কেবল নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ করার কোনো নির্দেশনা নেই।

তালেবান সরকারের অফিসিয়াল নির্দেশনায় কোথাও বলা হয়নি “নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ”।

নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেসব বই শরিয়াহ ও রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থি, সেগুলো পাঠ্যক্রমে রাখা যাবে না। অর্থাৎ নিষিদ্ধ তালিকায় নারী লেখকদের কিছু বই থাকলেও তা হয়েছে কেবল বইয়ের বিষয়বস্তুর কারণে, লেখক নারী হওয়ার কারণে নয়।

গত ২৫ আগস্ট আফগান শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে দুটি চিঠি পাঠায়।

প্রথম চিঠিতে বলা হয়, মোট ৬৭৯টি বই শরিয়াহ ও রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব বই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়ানো যাবে না, কোনো গবেষণায় উদ্ধৃত করা যাবে না এবং ব্যবহারও করা যাবে না। সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে।

দ্বিতীয় চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস থেকে বাদ দিতে বলা হয় ১৮টি বিষয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, আফগানিস্তানের সাংবিধানিক আইন, নির্বাচন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সমাজবিদ্যা, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র, সংবিধানের বিশ্লেষণ, জেন্ডার–সমতাভিত্তিক চাকরির বৈচিত্র্য, জেন্ডার কমিউনিকেশন এবং জনসংযোগে নারীর ভূমিকা।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, এসব বিষয়ে ব্যবহৃত পাঠ্যসামগ্রীর বহু অংশ শরিয়াহ ও রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এগুলো পাঠ্যক্রমে রাখা সম্ভব নয়।

নিষিদ্ধ তালিকায় নারী লেখকদের প্রায় ১৪০টি বই রয়েছে। তবে সেগুলো নিষিদ্ধ হয়েছে বইয়ের বিষয়বস্তু শরিয়াহ–বিরোধী হওয়ায়। নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ করার মানদণ্ড হলো শরিয়াহ ও ইমারাতে ইসলামিয়ার নীতির সঙ্গে বিরোধ। ফলে নারী বা পুরুষ; কোনো লেখককে আলাদাভাবে টার্গেট করা হয়নি।

কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আফগান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রিভিউ কমিটির একজন সদস্যের বক্তব্য উদ্ধৃত করে দাবি করেছে, নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ অফিসিয়াল চিঠির কোথাও এমন কোনো কথা নেই। এতে বোঝা যায়, খবরটি আংশিক সত্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে। বাস্তব নির্দেশনার মূল লক্ষ্য ছিল শরিয়াহ–বিরোধী বিষয়বস্তু অপসারণ; নারী লেখকদের বই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কেবল সেই কারণেই।

‘ইসলামী’ লেখকদের বই নিষিদ্ধ :

ইন্ডিপেন্টেন্টে প্রকাশিত একটি তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শিয়া ধর্ম, বিশ্বাসঘাতকদের প্রশংসা, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচার, গণতন্ত্র, পশ্চিমা স্বাধীনতা, নারীদের রক্ষা, সাম্যবাদ, ইরানের প্রশংসা, কুসংস্কার, তালেবান বিরোধী ধারণা, জাতিসংঘের আইন এবং প্রজাতন্ত্র সরকারের বর্ণনা বিষয়ে লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবানের নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার।

মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের লেখা বই “একত্ববাদের বই”, আবুল আলা মওদুদীর লেখা বই এবং জীবনী যেমন “কুরআনে চারটি সংস্কার”, সাইয়্যিদ কুতুবের লেখা বই যেমন “ইসলামে সামাজিক ন্যায়বিচার”, সাইয়্যেদ জামালুদ্দিনের লেখা বই এবং জীবনী, আবদুল্লাহ আযমের লেখা বই, আলী শরীয়তি, মোর্তেজা মোতাহারী, রামিন জাহানবেগলু এবং বেশ কয়েকজন আয়াতুল্লাহর লেখা বই নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে।

নিষিদ্ধের তালিকায় আরও রয়েছে, ইউসুফ কারজাভির লেখা বিখ্যাত বই “হালাল ও হারাম”।

সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট