১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পর্তুগালের গোল্ডেন ভিসা:  নাগরিকত্ব গ্রহণের এখনই সেরা সুযোগ

ইউরোপের অন্যতম আলোচিত রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম ‘পর্তুগাল গোল্ডেন ভিসা’ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। ২০১২ সালে চালু হওয়া এ কর্মসূচির মাধ্যমে পর্তুগালের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে এসেছে ৭০০ কোটি ইউরোর বেশি বিদেশি বিনিয়োগ। এতে পরিবারগুলো পুরোপুরি স্থানান্তর না হয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকত্বের পথে এগোনোর সুযোগ পেয়েছে।

২০২৫ সালেও এ কর্মসূচি চালু থাকলেও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নজরদারি, লিসবনে প্রস্তাবিত সংস্কার এবং প্রতিবেশী দেশ স্পেন ও মাল্টায় একই ধরনের ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সবার দৃষ্টি পর্তুগালের দিকে।

গোল্ডেন ভিসার গুরুত্ব
গোল্ডেন ভিসা ইউরোপের একটি বিশেষ কর্মসূচি, যা বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার বৈধ সুযোগ দেয়। এই ভিসা নিয়ে বছরে মাত্র সাত দিন পর্তুগালে থাকলেই রেসিডেন্সি নবায়ন করা যায়, আর পাঁচ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা সম্ভব—যা ইউরোপে সবচেয়ে দ্রুত সময়ের একটি।

ভিসাধারীরা পরিবারসহ আবেদন করতে পারেন এবং শেনজেন এলাকার ২৬টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। পর্তুগালের আরেকটি সুবিধা হলো—দেশের আইন পরিবর্তন হলেও আগের আবেদনকারীদের অধিকার অক্ষুণ্ন থাকে।

স্পেনে ২০২৫ সালের এপ্রিলে গোল্ডেন ভিসা বন্ধ হচ্ছে এবং গ্রিস নতুন কড়া নিয়ম চালু করছে। তাই বর্তমানে দ্রুত নাগরিকত্ব ও কম উপস্থিতির শর্তে সুযোগ দিচ্ছে একমাত্র পর্তুগালই।

বিনিয়োগের নতুন কাঠামো
২০২৩ সালে পর্তুগালের গোল্ডেন ভিসায় বড় পরিবর্তন আসে। এখন আর সম্পত্তি (বাড়ি বা ফ্ল্যাট) কিনে ভিসা পাওয়া যায় না। বরং এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এমন বিনিয়োগে, যা দেশের উন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে সাহায্য করে।

এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো—নিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ তহবিলে অন্তত ৫ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করা। এই টাকাগুলো ব্যবহৃত হয় বাস্তব সম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও নতুন উদ্ভাবন খাতে।

এছাড়া, কেউ চাইলে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করে অন্তত ১০টি চাকরি তৈরি করতে পারেন। ২.৫ থেকে ৫ লাখ ইউরো পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সংস্কৃতি বা নগর উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেও যোগ্য হতে পারেন।

এখন এসব তহবিল আরও বৈচিত্র্যময় হয়েছে। বিশেষ করে আমেরিকান নাগরিকদের জন্য এমন ফান্ড চালু হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও পর্তুগালের সম্পদ একসাথে ব্যবস্থাপনা করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকান বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে।

আইনি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্তুগাল সরকার নাগরিকত্বের সময়সীমা ৫ বছর থেকে ১০ বছরে বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এবং ভাষা ও বসবাসের শর্ত কঠোর করার উদ্যোগ নেয়। তবে সাংবিধানিক আদালত পরিবার পুনর্মিলনের মতো মূল বিধিনিষেধগুলো বাতিল করে দেয়, ফলে আপাতত বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে।

তবু ইউরোপীয় ইউনিয়ন “বিনিয়োগের মাধ্যমে রেসিডেন্সি” কর্মসূচিগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে বলেছে। ভবিষ্যতে পাঁচ বছরের নিয়মটি পরিবর্তিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনলাইন সেমিনারের ঘোষণা
এই পরিবর্তনগুলো ব্যাখ্যা করতে ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় হলবর্ন অ্যাসেটসের সিনিয়র পার্টনার ও গোল্ডেন ভিসা বিশেষজ্ঞ জেসন সোয়ান একটি ফ্রি লাইভ অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করছেন। সেখানে থাকবে বর্তমান আইনি কাঠামো, বিনিয়োগের নতুন বিকল্প ও সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব।

গোল্ডেন ভিসা কার জন্য উপযোগী
এই কর্মসূচিতে আবেদনকারীদের পর্তুগালের কর রেসিডেন্ট হতে হয় না, যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এটি উপযুক্ত বিশ্বভ্রমণকারী উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, অবসরপ্রাপ্ত বা ভবিষ্যতে ইউরোপীয় নাগরিকত্ব চাওয়া পরিবারের জন্য।

সময় এখনই কেন গুরুত্বপূর্ণ
বর্তমান আইনে নাগরিকত্ব পেতে পাঁচ বছরই যথেষ্ট, তবে ভবিষ্যতে তা ১০ বছরে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যারা এখন আবেদন করেন, তারা বর্তমান সুবিধার সুরক্ষা পাবেন।

এছাড়া কিছু বিনিয়োগ তহবিলে নির্দিষ্ট মুনাফার নিশ্চয়তা বা আগাম ছাড়ের সুবিধা চলছে, যা ভবিষ্যতে বাতিল হতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।