মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মূল্যস্ফীতি নিয়ে জনঅসন্তোষ বাড়তে থাকায় গরুর মাংস কফি কলা কমলার রসসহ ২০০টির বেশি খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাত ১২টা থেকে কার্যকর হওয়া এই শুল্কছাড়কে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, শুল্ক কিছু ক্ষেত্রে দামের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রায় কোনো ইনফ্লেশন নেই।
উচ্চ খাদ্যদামের কারণে সাম্প্রতিক ভার্জিনিয়া নিউ জার্সি ও নিউ ইয়র্ক সিটির স্থানীয় নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বড় ধরনের পরাজয় হয়। ওই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের সাফল্যের পেছনে খাদ্যদ্রব্যের সাশ্রয়ী মূল্য ছিল প্রধান ইস্যু।
এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন আর্জেন্টিনা ইকুয়েডর গুয়াতেমালা ও এল সালভাদরের সঙ্গে নতুন ফ্রেমওয়ার্ক বাণিজ্যচুক্তি করেছে। এসব দেশের কিছু খাদ্য ও কৃষিপণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে। হোয়াইট হাউস জানায় যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন না হওয়া বা ঘাটতি থাকা পণ্যগুলোই শুল্কছাড়ের আওতায় এসেছে। তালিকায় রয়েছে কমলা আসাই বেরি পাপরিকা কোকো সার খাদ্যউৎপাদনের রাসায়নিক এমনকি চার্চের কমিউনিয়ন ওয়েফারও।
সাম্প্রতিক কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সে দেখা যায় গরুর মাংসের দাম আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি স্টেকের দাম ১৭ শতাংশ বেশি কলা ৭ শতাংশ এবং টমেটোর দাম ১ শতাংশ বেড়েছে। মোটভাবে ঘরে খাওয়ার খাদ্যব্যয়ের হার গত সেপ্টেম্বর ২.৭ শতাংশ বেড়েছে যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা আমদানি শুল্কই খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আগামী বছর কোম্পানিগুলো নতুন শুল্ক পুরোপুরি ভোক্তাদের ওপর চাপালে দাম আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন খাদ্যশিল্প। FMI Food Industry Association এর প্রেসিডেন্ট লেসলি সারাসিন বলেন, এতে ভোক্তারা উপকৃত হবেন এবং কফির দামও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে স্পিরিটস পণ্যের শুল্ক কমানো হয়নি বলে হতাশা জানিয়েছে Distilled Spirits Council। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ক্রিস সুয়ংগার বলেন, স্কচ কনিয়াক আইরিশ হুইস্কির মতো উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্য যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করা যায় না। ছুটির মৌসুমে এসব পণ্যের ওপর শুল্ক থাকা আতিথেয়তা শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও শুল্কছাড় প্রয়োজন হবে কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয় না। আমরা সামান্য রোলব্যাক করেছি মাত্র। কফির দাম বেশি ছিল খুব দ্রুত কমে যাবে।
হাউস ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট রিচার্ড নিল বলেন, ট্রাম্প নিজের লাগানো আগুন নিজেই নেভাচ্ছেন এবং সেটাকেই অগ্রগতি হিসেবে দেখাচ্ছেন। তার দাবি শুল্ক আরোপের পর থেকেই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং উৎপাদন খাত টানা কয়েক মাস ধরে সংকুচিত হচ্ছে।