২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইউরোপ

ইহুদিবিদ্বেষমূলক সহিংসতা রোধে ব্যবস্থা নিতে ফ্রান্স ব্যর্থ : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

ইহুদিবিদ্বেষমূলক সহিংসতা রোধে ব্যবস্থা নিতে ফ্রান্স ব্যর্থ : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

ইহুদিবিদ্বেষমূলক সহিংসতা রোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে ফ্রান্স ব্যর্থ হয়েছে। এ কথা উল্লেখ করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে খোলা চিঠি লিখেছিলেন দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত চার্লস কুশনার। এমন অভিযোগের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ফ্রান্স। রাষ্ট্রদূতকে তলব করার বিষয়টি জানিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। চার্লস কুশনারের ওই খোলাচিঠিটি রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে ইসরায়েল নিয়ে ফ্রান্সের সাম্প্রতিক সমালোচনা এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে মন্তব্য করেছেন তিনি।

চার্লস কুশনার চিঠিতে লিখেছেন, ‘ইসরায়েলকে তিরস্কার করে (ফরাসি) সরকারের বিবৃতি এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত উগ্রপন্থীদের শক্তিশালী করছে, সহিংসতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে এবং ফ্রান্সে ইহুদিদের জীবন বিপন্ন করছে। আজকের দুনিয়ায় জায়নবাদ বিরোধিতাই হলো ইহুদিবিদ্বেষ। এটাই সহজ ও সরল সত্য।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন অভিযোগের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে প্যারিস। রবিবারই মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নতুন এসব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছে ফ্রান্স। রাষ্ট্রদূতের এসব অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।’ ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে ফ্রান্স ‘সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চার্লস কুশনারের মন্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। বিশেষ করে কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার যে দায়িত্ব রয়েছে, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা ছাড়া কুশনারের এসব মন্তব্য আটলান্টিকের দুই পারের দেশ ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মানদণ্ড পূরণ করে না। এতে মিত্রদের মধ্যে যে বিশ্বাস থাকা উচিত, তারও প্রতিফলন নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর অবশ্য চার্লস কুশনারের মন্তব্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। দপ্তরের মুখপাত্র টমি পিগট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রদূত কুশনার ফ্রান্সে আমাদের সরকারের প্রতিনিধি। সেই ভূমিকায় তিনি আমাদের জাতীয় স্বার্থ এগিয়ে নিতে চমৎকার কাজ করছেন।’

চার্লস কুশনারের ‘কুখ্যাতি’ বেশ পরিচিত উল্লেখ করে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল–জাজিরার সাংবাদিক রোজালিন্ড জর্ডান বলেন, ‘কর ফাঁকি দেওয়া, সাক্ষীকে প্রভাবিত করা এবং প্রতারণার অভিযোগে (২০০৫ সালে) তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই বছর জেল খেটেছেন। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে ক্ষমা করেন। ফ্রান্সে মাত্র এক মাস হলো তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।’

এদিকে ইসরায়েলের প্রায় পুরোপুরি অবরোধে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের হামলার পাশাপাশি সেখানে অনাহারেও প্রতিদিন অনেক ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরের যুদ্ধে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটির প্রায় ২৩ লাখ মানুষের অধিকাংশ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে গাজা উপত্যকার গাজা নগরী সম্পূর্ণ দখলের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। তার অংশ হিসেবে সম্প্রতি গাজা নগরের উপকণ্ঠে বিমান হামলা ও ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করছে ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্সসহ ইসরায়েলের আরও কিছু মিত্রদেশ।

চার্লস কুশনার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জেরাড কুশনারের বাবা। জেরাড কুশনার প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের উপদেষ্টা ছিলেন। চার্লস কুশনারের চিঠির আগে মাখোঁর উদ্দেশে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। এতেও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফ্রান্সের সিদ্ধান্তকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।