ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত পর্তুগাল এক মনোমুগ্ধকর দেশ। যার সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির অপূর্ব মেলবন্ধনে। প্রাচীন দুর্গ, রাজপ্রাসাদ ও চার্চের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন। মনোরম উপকূল, স্বচ্ছ নীল জলরাশি ও সোনালি বালুকাবেলা যেমন পর্যটকদের মুগ্ধ করে, তেমনি পাহাড়ি গ্রাম, আঙ্গুরের বাগান আর ঐতিহ্যবাহী শহরগুলো ভ্রমণপিপাসুদের দেয় এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
লিসবন, পোর্তো কিংবা সিন্ত্রার মতো শহরে ঘুরে দেখা যায় একদিকে রোমান ও মুরিশ সভ্যতার ছাপ, অন্যদিকে আধুনিক ইউরোপের ছন্দ। ফলে পর্তুগাল শুধু একটি ভ্রমণ গন্তব্য নয়, বরং ইতিহাস, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত পাঠশালা।
আজ আপনাদের সেই পর্তুগালের সেরা ১০ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানাবো :
১. লিসবন
পর্তুগালের রাজধানী লিসবন ইউরোপের অন্যতম সুপরিচিত ও ঐতিহাসিক শহর। শহরজুড়ে রয়েছে অসংখ্য পার্ক, যেখানে মানুষ হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম ও অবসর সময় কাটানোর সুযোগ পান। প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহ্যে ঘেরা লিসবনের আলফামা এলাকায় অবস্থিত মনোমুগ্ধকর একটি ঝরনা দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ যোগ করে। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, প্রাণবন্ত জীবনধারা ও নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য লিসবনকে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ও প্রসিদ্ধ শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২. পোর্টো
পর্তুগালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোর্টো তার রঙিন ভবন ও অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। শহরের অন্যতম আকর্ষণ সাও বেন্টো রেলস্টেশন, যার দৃষ্টিনন্দন নকশা ও দেয়ালচিত্র পর্যটকদের মুগ্ধ করে। দৌরো উপত্যকার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পোর্টোকে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির মনোরম সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই শহর দর্শনার্থীদের কাছে সবসময়ই প্রিয় ভ্রমণগন্তব্য।
৩. মাদেরিয়া
মাদেরিয়া একটি দ্বীপ। এখানে রয়েছে পোর্ট সান্তো নামে একটি বন্দর। এছাড়া মাদেরিয়ার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো মিউজিয়াম ফুটবলপ্রেমী পর্যটকদের অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। আরও একটি মিউজিয়াম রয়েছে যার নাম মাদেরিয়া ওয়াইন মিউজিয়াম। এসব মিউজিয়ামে মানুষ সকাল-সন্ধ্যা আসেন।
৪. এরিকেইরা
পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এরিকোইরা এটি ছোট একটি গ্রাম। এর বেশিরভাগ মানুষের পেশা মৎস্যজীবী। লিসবন থেকে খুব কম সময়ে এই গ্রামে আসা যায়। এরিকেইরা গ্রামে অনেক সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায়। মানুষ এই গ্রামকে ভালোবাসে।
৫. আলগার্ভ
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু আবহাওয়ার অঞ্চল আলগার্ভ। এই অঞ্চলে একাধিক মনোরম সমুদ্রসৈকত এবং অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এসব সমুদ্রসৈকত ও দর্শনীয় স্থানে সবসময় পর্যটকদের ভীড় দেখা যায়।
৬. আলেন্টেজো
আলেন্টেজো অঞ্চলটি রয়েছে পর্তুগালের প্রাচীন ইতিহাসসমৃদ্ধ। চ্যাপেলা ডস ওসোস বা চ্যাপেল অব বোনস নামে একটি গীর্জা রয়েছে। ষোড়শ শতাব্দিতে নির্মিত গীর্জাটির দেয়ালে আনুমানিক ৫ হাজার মানুষের স্কেলিটন রয়েছে। এটি রোমান মন্দিরের মতো পবিত্র ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হয় স্থানীয়দের কাছে।
৭. সিন্ট্রা
শিশুতোষ রূপকথার বিখ্যাত লেখক হান্স খ্রিস্টান অ্যান্ডারসন সিন্ট্রা শহরে বসবাস করেন। তার বাসভবন সিন্ট্রাস উড নামে পরিচিত। এই শহরে রয়েছে অসংখ্য অভিজাত ভবন ও সুরক্ষিত দুর্গ। বিশ্বের মানুষ এই শহরকে অনেক পছন্দ করে।
৮. ওবিডোস
ওবিডোস শহরে রয়েছে অসংখ্য সুরক্ষিত দুর্গ। সুদৃশ্যমান ভবনে পরিপূর্ণ এই শহরে রয়েছে অনেক অভিজাত ভবন। পর্তুগালের এই শহরে রয়েছে লিটারেরি ম্যান হোটেল নামে একটি লাইব্রেরি রয়েছে। এই শহর অনেক মানুষের কাছে পছন্দের।
৯. সেরা ডা এস্ট্রেলা
পাহাড়ঘেঁষা অঞ্চল সেরা ডা এস্ট্রেলা। প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য এই অঞ্চল উপযুক্ত স্থান। শীতকালে এখানে স্কিইং করার সুযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে পর্তুগালের এই অঞ্চল সেরা ৭ বিস্ময়কর স্থানের অন্যতম ছিলো। প্রকৃতিই এখানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রকৃতির টানে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করেন।
১০. কইম্ব্রা
পর্তুগালের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই শহর সম্পর্কে পর্যটকদের আগ্রহের কমতি নেই। এই শহরে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই শহরে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ইউনিভার্সিটি অব কইম্ব্রা। এই ইউনিভার্সিটি দেশটির অনেক পুরনো ইউনিভার্সিটি হিসেবে পরিচিত।