১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সৎ বন্ধুত্ব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ

আবদুল আহাদ সালমান


মানুষ একা বসবাস করতে পারে না। সমাজে টিকে থাকতে হলে পরস্পরের সহযোগিতা, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের প্রয়োজন হয়। তাই জীবনে বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সব বন্ধু সমান নয় কারও বন্ধুত্ব সুখ ও শান্তি বয়ে আনে, আবার কারও বন্ধুত্ব মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এজন্য ইসলাম আমাদেরকে বন্ধুত্ব নির্বাচনের বিষয়ে বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

বন্ধুত্ব বিষয়ে কুরআনের নির্দেশনা :

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, মুমিনরা যেন মুমিনদের ছেড়ে কাফিরদের বন্ধু না বানায়। আর যে এমন করবে, তার আল্লাহর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান: ২৮)

আল্লাহ আরও বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও। (সূরা তাওবা: ১১৯)

এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, বন্ধুত্ব এমন মানুষের সঙ্গে করা উচিত যারা ঈমানদার, সত্যবাদী ও সৎ চরিত্রের অধিকারী।

হাদিসে বন্ধুত্বের গুরুত্ব :

রাসূলুল্লাহ (সা.) বন্ধুত্বের প্রভাব সুন্দরভাবে বোঝাতে বলেছেন, ভালো ও খারাপ বন্ধুর উদাহরণ হলো সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের মতো। সুগন্ধি বিক্রেতার কাছ থেকে তুমি হয়তো সুগন্ধি কিনবে, উপহার পাবে, কিংবা অন্তত তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কামারের পাশে থাকলে তোমার কাপড় পুড়ে যাবে বা দুর্গন্ধ পাবে। (সহিহ বুখারি: ২১০১)

অর্থাৎ, ভালো বন্ধুর প্রভাবে তুমি ভালো হবে, আর খারাপ বন্ধুর প্রভাবে তুমি নষ্ট হয়ে যেতে পারো।

অন্য এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, অসৎ বন্ধুর চেয়ে একা থাকা ভালো, আর একা থাকার চেয়ে সৎ সঙ্গী থাকা শ্রেয়। (সহিহ বুখারি: ৬৬৯৫)

তিনি আরও বলেন, মানুষ তার বন্ধুর চরিত্র অনুসারে প্রভাবিত হয়। তাই কেউ কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে, তা ভালোভাবে যাচাই করুক। (জামে তিরমিজি: ২৩৭৮)

সাহাবা ও ইসলামী পণ্ডিতদের মতামত :

হজরত আলী (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি চিন্তাভাবনা করে বন্ধু নির্বাচন করে, তাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী ও আন্তরিক হয়।

ইমাম গাজালি (রহ.) বন্ধুর মধ্যে তিনটি গুণ খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন;
১। সে যেন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হয়।
২। তার চরিত্র যেন সুন্দর হয়।
৩।সে যেন আল্লাহভীরু ও নেককার হয়।

ভালোবাসা ও সৎ সঙ্গের ফল :

একবার এক বেদুইন নবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূলুল্লাহ! কিয়ামত কবে হবে? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি তার জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ? লোকটি বলল, আমি বেশি নামাজ, রোজা বা দান করিনি, কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। তখন নবীজি (সা.) বললেন, তুমি তার সঙ্গেই থাকবে, যাকে তুমি ভালোবাসো। (সহিহ মুসলিম: ২৬৩৯)

এই হাদিস আমাদের শেখায়, নেককারদের ভালোবাসা ও তাদের সঙ্গ গ্রহণের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।

প্রকৃত বন্ধুর গুণাবলি :

হজরত আলকামাহ (রহ.) বলেন, বন্ধুত্ব করো তার সঙ্গে,
১। যার সান্নিধ্যে তুমি উন্নত হতে পারবে।
২। যে তোমার কষ্টে পাশে দাঁড়ায়।
৩। যে তোমার ভুল ধরিয়ে দেয়।
৪। তোমার ভালো গুণগুলো মনে রাখে।
৫। আর বিপদে তোমাকে সান্ত্বনা দেয়।

এমন বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু, যে তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের পথে রাখে।

সৎ সঙ্গের প্রভাব :

ভালো বন্ধু মানুষের জীবনে আশীর্বাদ স্বরূপ। অনেক সময় দেখা যায়, খারাপ মানুষও সৎ ও পরহেজগার ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে এসে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেমন মাদকাসক্ত, চোর, বা দুর্নীতিবাজ কেউ একজন আল্লাহভীরু মানুষের সোহবতে এসে তাওবা করে নতুন জীবন শুরু করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, উম্মতের আলেমরা আমার উত্তরাধিকারী। (জামে তিরমিজি: ২৬৮২)

তাই আমাদের উচিত আলেম ও নেককার ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থাকা, তাদের থেকে শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা গ্রহণ করা।

ভালো বন্ধু জীবনের জন্য এক মহা নিয়ামত। সে তোমাকে সৎ পথে রাখে, অন্যায়ের পথ থেকে দূরে রাখে। অন্যদিকে, খারাপ বন্ধু মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। তাই বলা হয়ে থাকে “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”

আসুন, আমরা এমন বন্ধু বেছে নিই যারা আমাদের ইমান, চরিত্র ও জীবনকে সুন্দর করে তুলবে। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সৎ, সত্যবাদী ও পরহেজগার বন্ধুর সঙ্গ দান করুন। আমিন।

লেখক : সম্পাদক, ইউরোবাংলা