পাকিস্তানে সেনাপ্রধানকে আরও ক্ষমতাবান করতে এবং প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের আজীবন দায়মুক্তি দিতে একটি সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করেছে দেশটির পার্লামেন্ট।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হওয়া এই ২৭তম সংশোধনী বিল নিয়ে দেশটিতে গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সংশোধনীর মাধ্যমে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ নামে একটি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যেখানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ক্ষমতা একীভূত হবে। একই সঙ্গে গঠন করা হবে একটি ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত, যা সংবিধানসংক্রান্ত মামলা পরিচালনা করবে। বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন মাত্র চারজন আইনপ্রণেতা। এর আগে, দুই দিন আগে সিনেটেও বিলটি পাস হয়।
এই সংশোধনের ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তিন বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন। গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার পর তিনি ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হয়েছিলেন। নতুন আইনে বলা হয়েছে, ফিল্ড মার্শাল, এয়ার মার্শাল বা অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট পদে উন্নীত কর্মকর্তারা আজীবন মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করবেন এবং ফৌজদারি মামলার দায় থেকে মুক্ত থাকবেন। আগে এই দায়মুক্তি কেবল রাষ্ট্রপতির জন্য সংরক্ষিত ছিল।
আইনজীবী ওসামা মালিক বলেছেন, এই সাংবিধানিক সংশোধনী সামরিক কর্তৃত্ব বাড়াবে এবং গণতন্ত্রের অবশিষ্ট কাঠামো কার্যত বিলীন হয়ে যাবে। তার মতে, এটি বেসামরিক তদারকির ক্ষমতা সরিয়ে দিয়ে সামরিক কাঠামোর ভারসাম্য নষ্ট করবে।
বিলটি পাসের প্রক্রিয়া নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে, কারণ এমন বড় ধরনের সাংবিধানিক সংশোধনী সাধারণত দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়, কিন্তু এবার তা অস্বাভাবিক দ্রুততায় হয়েছে। প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিলটির প্রশংসা করে বলেছেন, এটি প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য ও জাতীয় ঐক্যের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের বীরদের যথাযথ সম্মান জানানোই এই পরিবর্তনের লক্ষ্য।
তবে সমালোচকদের মতে, এই পরিবর্তন ক্ষমতাকে সামরিক বাহিনী ও সরকার-সমর্থিত গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত করবে। নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠনের মাধ্যমে সংবিধানসংক্রান্ত মামলাগুলো এখন আর সুপ্রিম কোর্টে নয়, সরকার-নিয়োজিত বিচারকদের হাতে যাবে।
বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই বিলের প্রতিবাদে ভোটাভুটির আগে পার্লামেন্ট ত্যাগ করে। তাদের অভিযোগ, বিলটি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। পিটিআই মুখপাত্র জুলফিকার বুখারি বলেন, গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার যে ক্ষতি হলো, তাতে পাকিস্তান আরও দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
এছাড়া সংবিধান বিশেষজ্ঞ আসাদ রহিম খান সতর্ক করে বলেছেন, বিচার বিভাগের ওপর এমন আঘাত গত শতাব্দীতে দেখা যায়নি। আজ যারা এই বিল পাসে উল্লাস করছে, একদিন তারাই ন্যায়বিচারের জন্য সেই আদালতের কাছেই ফিরবে।
সূত্র: টেলিগ্রাফ