১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পর্তুগিজরা আমাদেরকে ব্যাপকভাবে সহযোগীতা করে

পর্তুগালের ঐতিহ্যবাহী শহর পোর্তোয় সোস্যালিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থী হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি শাহ আলম কাজল। ২৭.৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়ে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের গৌরব বাড়িয়েছেন আরও এক ধাপ।

ইউরোবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত জীবন, রাজনৈতিক যাত্রা এবং পর্তুগালে বাংলাদেশ কমিউনিটিকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ আশরাফুল ইসলাম

ইউরোবাংলা : প্রথমেই জানতে চাচ্ছি, পর্তুগালে একজন বাংলাদেশি হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে পেরে আপনার অনুভূতি কেমন?

শাহ আলম কাজল : এটা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের বিরাট একটা জনগোষ্ঠী এখানে বসবাস করে। তাছাড়া আমরা যেহেতু পর্তুগালে আছি, এই দেশের জন্য কিছু করাটাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেই হিসেবে আমি আনন্দিত এবং খুশি যে, সবার জন্য কাজ করতে পারব একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে।

ইউরোবাংলা : আমাদের পাঠকদের জন্য আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয়টা যদি একটু তুলে ধরতেন।

শাহ আলম কাজল : আমি মুহাম্মাদ শাহ আলম কাজল। পর্তুগালে আছি ১৯৯২ সাল থেকে। আমি একজন ব্যবসায়ী। তিন সন্তান রয়েছে আমার, তারা সবাই বিবাহিত। আমি একজন মুসলিম। বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পর্তুর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়া মসজিদ কমিটিরও সভাপতি। একই সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আমি জড়িত। আমি কাজ করে যাচ্ছি এই দেশের জন্য এবং আমার দেশের জন্য।

ইউরোবাংলা : কত বছর ধরে পর্তুগালে আছেন এবং কীভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হলেন?

শাহ আলম কাজল : আপনার প্রশ্নের প্রথমাংশের উত্তর আগের প্রশ্নে ইতোমধ্যে দিয়েছি। আর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কারণটা আমি বলি, আমাদের অনেক দাবি-দাওয়া কিংবা সমস্যা থাকে, যেগুলো যেগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরা দরকার। এজন্যই মূলত রাজনীতিতে আসা।

ইউরোবাংলা : এখানে রাজনীতি করতে গিয়ে কোন কোন ধরণের চ্যালেঞ্জ আপনাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে?

শাহ আলম কাজল : এবারের নির্বাচনটা আসলে একটু ব্যতিক্রম ছিল। কারণ ২০১৭ সালে আমি এখানে সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তারপর ২০২১ সালে এসে নির্বাচিত হই; কিন্তু এবারের ইলেকশনের মতো কঠিন আর দেখিনি। বিশেষ করে উগ্র ডানপন্থীরা আমার নামে অনেক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। আমাদের পার্টির নামেও ছড়িয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, এগুলো অতিক্রম করে নির্বাচিত হতে পেরেছি, এটাই বড় কথা।

ইউরোবাংলা : আপনার নির্বাচনী প্রচারণা কেমন ছিল এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সহযোগীতা কতটুকু পেয়েছেন?

শাহ আলম কাজল : এবারের নির্বাচনে আমরা কোমর বেধে নেমেছিলাম মূলত। আমরা লক্ষ্য ছিল যেভাবেই হোক আমাদের প্রার্থীদেরকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। অনেক মেহনত করেছি আমরা। জনগণের দুয়ারে গিয়েছি বারবার। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি বিশেষভাবে আমার পাশে ছিল, এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

ইউরোবাংলা : বাংলাদেশ কমিটিনিটি নিয়ে আপনার ভাবনা কী? কী কী কাজ করতে চান তাদের জন্য?

শাহ আলম কাজল : আপনি জেনে খুশি হবেন, আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি পর্তুগালের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। এখানকার সরকারি সংস্থা আইমা কর্তৃক অনুমোদিত। আমরা তাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করি। পাশাপাশি এদেশের সরকার ও বিভিন্ন সংস্কৃতিক সংস্থার সাথে কাজ করি, ফলে আমরা এখানে ইতোমধ্যে একটা শহীদ-মিনার স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। এখানে একুশে ফেব্রুয়ারিতে একটা পদক চালু করেছি আমরা, যেটা একুশে পদকের আলোকে। এছাড়াও আইমা’র সম্পৃক্ততায় গত এক বছর থেকে ফ্রী ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স আমরা চালু করেছি, যেখান থেকে সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়।

ইউরোবাংলা : এখানে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে চাকরি, নির্বাচনের অংশ নেওয়ার আগে আপনি এই বিষয়ে কাজ করবেন বলে প্রচারণায় উল্লেখ করেছেন, এই বিষয়ে কী ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?

শাহ আলম কাজল : আসলে চাকরির ব্যাপারে যেটি বলছেন, সেই ব্যাপারটি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছি। একই সাথে চাকরির ক্ষেত্র তৈরির জন্য সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কনফারেন্স বা প্রজেক্টও অব্যহত রয়েছে।

ইউরোবাংলা : স্থানীয় পর্তুগিজ নাগরিকদের সমর্থন আদায়ে কীভাবে কাজ করেছেন?

শাহ আলম কাজল : পর্তুগিজরা আমাদেরকে ব্যাপকভাবে সহযোগীতা করে আসলে। তবে ইদানীং দেখছি, আমাদের দেশের কিছু ভাইদের কর্মকাণ্ড কিংবা কথার দ্বারায় তাদের মধ্যে বিরক্তিভাব প্রকাশ পাচ্ছে। আমাদের ব্যবহারে ওরা আসলে কিছুটা বিরক্ত। এটা দুঃখজনক।

ইউরোবাংলা : যারা পর্তুগালে আসতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতেন…।

শাহ আলম কাজল : যারা পর্তুগালে আসতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, আপনারা পর্তুগাল আসার আগে অবশ্যই টেকনিক্যাল কাজ শিখে তারপর আসবেন। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স করে আসেন, এখানে সেটার মূল্য নেই। তবে টেকনিক্যাল কাজ শিখে আসলে,  এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক অনেক চাহিদা আছে। তাছাড়া ভাষার বিষয়টা অনেক বড় একটা ব্যাপার। এটা অনেক জরুরি।

অন্তত প্রাথমি পর্যায়ের পর্তুগিজ ভাষাটা আপনার জেনে আসতে হবে। আর আসার পরে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, আপনি একটা ভিন্ন দেশে আসছেন। এখানকার কালচার আপনাকে মেনে নিতে হবে।

ইউরোবাংলা : আপনি কি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছেন?

শাহ আলম কাজল : আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নাই; ইচ্ছেও নাই, কারণ আমি থাকি পর্তুগাল। বাংলাদেশে রাজনীতি করলে জনগণকে আমি কিছুই দিতে পরব না। আমি যেহেতু এখানে আছি এবং রাজনীতি করছি, এখানকার মানুষদের নিয়েই আমার চিন্তাভাবনা থাকা উচিত।

ইউরোবাংলা : আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

শাহ আলম কাজল : আপনাকে এবং ইউরোবাংলা পরিবারকেও ধন্যবাদ।