১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নাযর ইবনুল হারিস: সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষণ

আবুল আলা মাসুম


বাদ্যযন্ত্র সংক্রান্ত এই যে আমাদের মধ্যকার দ্বন্দ এর পিছনেও মূল কালপ্রিট নাযর ইবনুল হারিস। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলাম প্রচারে বাধা দানের উদেশ্যে সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শুরু করেন।

কুরাইশরা তখন “নাসব” নামে এক ধরনের হালকা আরবী সুর জানতেন। যেটা ছিল “হুদা” বা গানের একধরনের সূক্ষ্ম রূপ। নযর ইবনুল হারিসই প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি পারসিক সুরে উদ বাজাতে শুরু করেন।

কোরানের মাঝে এক মোহনীয় শক্তি ছিল। কোরানের তেলাওয়াত শুনলে তার শ্রোতারা মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল। এমনকি সে নাম আবু লাহাব বা আবু জাহেল হলেও। কোরানের এ মোহনীয় শক্তির বিরুদ্ধে উপদেশ বা বক্ততা কোন কাজে আসছিলনা। নাযর ইবনুল হারিস এই বিষয়টি গভীর ভাবে উপলব্ধি করেন।

বিকল্প তৈরিতে তিনি ইরাকের “হীরা” অঞ্চলে গিয়ে “উদ” নামে এক ধরনের আরবি গিটার বাজানো শিখেছিলেন। একই সাথে “উদ” এর তাল, লয়, সুরে গান গাওয়া শিখেছিলেন। এরপর তিনি মক্কায় ফিরে কুরাইশদের এসব শেখাতে শুরু করেন। বিশেষ করে সে সকল দাসীদেরকে যারা তার অধিভুক্ত ছিলেন।

নারী শিল্পী দিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্ঠ করার কাজটিও তার হাত ধরে শুরু হয়। নজর বিন হারিস বেশ কিছু দাসী কিনেছিলেন যারা কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি মূলত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির গোড়াপত্তন করেছিলেন।

এই দাসীদের তিনি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন পরিচালনায় ব্যবহার করতেন। তিনি সমাজের মানুষের ওপর গভীর দৃষ্টি রাখতেন। কোন মানুষ রাসুল সা. এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন এ তথ্য তার সামনে আসার সাথে তিনি তাকে নিজের গায়িকা দাসীর কাছে নিয়ে যেতেন।

দাসীকে বলতেন:“তাকে খাওয়াও, পান করাও, গান শোনাও। এটা মুহাম্মদের নামাজ, রোজা, ও তার সঙ্গে যুদ্ধ করার আহ্বানের চেয়ে অনেক উত্তম।” অর্থাৎ, সে বলত— গান, বাদ্যযন্ত্র ও ভোগ-বিলাস ইবাদত ও ইসলামি আদর্শের চেয়ে শ্রেয়।

আর রাহিকুল মাখতুম এ বলা হয়েছে, ইসলামের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তির ওপর নারী শিল্পীদের লেলিয়ে দেয়া হত। এক পর্যায়ে সেই লোকের মধ্যে ইসলামের প্রতি কোনো আকর্ষণ অবশিষ্ট থাকত না।

তার সাংস্কৃতিক বক্তব্য, ইরাকের হিরা নগর থেকে গল্প কিনে আনা ও তার সার্বিক কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা সূরা লুকমান এর ৬নং আয়াতটি নাজিল করেন:﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ﴾

আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে, যারা অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা, গল্প-কাহিনী) খরিদ করে, যাতে করে অজ্ঞতার বশে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করে এবং সেটাকে হাসি-তামাশা হিসেবে নেয়। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।”

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন উম্মাহর জন্যে সবচেয়ে অধিক ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই পথ ধরে ঈমান হারাচ্ছে উম্মাহ। এটি ঈমানের ব্লাকহোল। এই ব্লাকহোল থেকে উম্মাহর যুবকদের ঈমান বাঁচাতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবী।

লেখক : গীতিকার, সুরকার ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

প্রথম পর্ব : নাযর ইবনুল হারিস: রাসুল (সা.) এর সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দী