দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে আটক হওয়া সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফেরার পর এ অভিযোগ করেন ওই নৌবহরে অংশ নেওয়া কয়েকজন আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মী।
এদিকে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩৭ জনকে শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৬ জন তুরস্কের নাগরিক।
অন্যরা আমেরিকা, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের অধিকারকর্মী বলে জানান তুরস্কের কর্মকর্তারা।
বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ইস্তাম্বুলে ফিরে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তুরস্কের সাংবাদিক এরসিন সেলিক জানান, তিনি দেখেছেন, ইসরাইলি বাহিনী গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতন করেছে, মাটির ওপর দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেছে, ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করেছে।
ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে একই কথা বলেন মালয়েশিয়ার অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি ও আমেরিকার উইন্ডফিল্ড বিবার। তাদের ভাষ্যমতে, থুনবার্গকে ধাক্কা দিয়ে তার গায়ে জোর করে ইসরাইলি পতাকা মুড়িয়ে দেওয়া হয়।
হাজওয়ানি হেলমি সাংবাদিকদের বলেন, এটা ছিল দুর্বিষহ। ওরা আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেছে। আটক করার পর অধিকারকর্মীদের খাবার, সুপেয় পানি ও ওষুধ দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
উইন্ডফিল্ড বিবার অভিযোগ করেন, থুনবার্গের সঙ্গে ভয়ানক আচরণ করা হয়েছে। তাকে প্রচারের মাধ্যম বানানো হয়েছে।
অভিজ্ঞতা হাতরে এই মার্কিনি বলেন, একটা কক্ষে ইসরাইলের উগ্র-দক্ষিণপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির প্রবেশ করার পর সেখানে ধাক্কা মেরে গ্রেটাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
তুরস্কের টেলিভিশন উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার বলেন, আমাদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করা হয়েছে। তিন দিন ধরে আমাদের খাবার দেওয়া হয়নি, পানি দেওয়া হয়নি। টয়লেটে থাকা পানি খেতে হয়েছে। ভীষণ গরম ছিল। আমরা রীতিমতো ঝলসে গেছি। গাজাবাসীর সঙ্গে আসলে কী ঘটছে, এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।
থুনবার্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কথা জানিয়ে ইতালির সাংবাদিক লরেঞ্জো আগোস্তিনো তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলুকে বলেন, গ্রেটা থুনবার্গ একজন সাহসী নারী। বয়স মাত্র ২২ বছর। তাকে অপমান করা হয়েছে। তার গায়ে ইসরাইলি পতাকা মুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে একটি ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়েছে।
তুরস্কের অধিকারকর্মী আয়চিন কানতুগলু ইসরাইলি বন্দিশালায় রক্তমাখা দেয়ালে আগের বন্দীদের নানা লেখা দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা দেখেছি, মায়েরা নিজেদের সন্তানের নাম দেয়ালে লিখে গেছেন। আমরা আসলেই কিছুটা অনুভব করতে পেরেছি, ফিলিস্তিনিরা কোন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে, ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানান, তার দেশের ২৬ জন নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে ১৫ জন এখনো ইসরায়েলে আটক রয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক সুমুদ ফ্লোটিলার অধিকারকর্মীদের বরাতে ইসরায়েলি অধিকার সংস্থা আদালাহ জানিয়েছে, বন্দীদের হাত বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের খাবার, পানি, ওষুধ দেওয়া হয়নি। টয়লেটে যেতে দেওয়া হয়নি। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আইনি অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
তবে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।