দিনভর পরিশ্রমের পর দেহ-মনের জন্য সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো বিশ্রাম আর শান্তিপূর্ণ ঘুম। আর সেই ঘুম নিশ্চিত করতে প্রয়োজন প্রশান্তিময় পরিবেশ। প্রশান্তির আবহ তৈরি করতে কিন্তু বিলাসিতার দরকার নেই; বরং অন্দরসজ্জায় রঙের সঠিক ব্যবহার, আসবাবপত্রের সুষম বিন্যাস আর অনুষঙ্গ বাছাইয়ের সামান্য কিছু কৌশলই এনে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত মানসিক স্বস্তি।
রঙের বিন্যাস
শোবার ঘরের অন্দরের জন্য হালকা রং ভালো। তাতে পরিবেশ হয় আরামদায়ক। ধরা যাক, সমুদ্রের নীল রংটাই বেছে নিলেন। তাহলে দেয়ালে ব্যবহার করুন এর হালকা শেড। বেড কভারের জন্য বেছে নিন এরই একটু গাঢ় শেড। বেড কভারটিতে থাকতে পারে এই গাঢ় শেড আর শুভ্রসাদা রঙের সমন্বয়ে হালকা কারুকাজ। অ্যাপ্লিক, হ্যান্ড পেইন্ট, প্রিন্ট, ব্লক বা স্ক্রিনপ্রিন্ট—নানাভাবেই বেড কভারে ফুটিয়ে তুলতে পারেন নকশা।
তবে বিছানার চাদর আর বালিশের জন্য সাদার শুভ্রতাই বেছে নিন। পর্দার জন্য আবার সমুদ্রের নীলেই ফিরে যান। হালকা ধরনের শেড বেছে নিন। দুটি পর্দার মধ্যে দিন শুভ্রসাদা রঙের পর্দা। এভাবে মোট পাঁচখানা পর্দা এক সারিতে সাজিয়ে দেখুন। অন্দরের রূপ বদলে যাবে। ঘরের ছাদ আর মেঝে সাদাই হোক।
একটি অনুষঙ্গ হোক আলাদা
ঘরের কোনো একটি অনুষঙ্গ হোক একেবারে ভিন্ন কোনো রঙা; হতে পারে সেটি একটি ল্যাম্পশেড কিংবা বাথরুমের সামনের পাপোশ। চাইলে ঘরের এক কোণে ছোট–বড় তিনখানা মোম রাখতে পারেন। হলুদ, কমলা আর লালের মতো উজ্জ্বল রঙের মোম বেছে নেওয়া যেতে পারে। এগুলো আবার সুগন্ধি মোমও হতে পারে। তাতে অন্দর যেমন হবে দৃষ্টিনন্দন, তেমনি সুবাসিতও থাকবে।
প্রকৃতিতেই প্রশান্তি
প্রকৃতির খানিকটা ছোঁয়াও অন্দরে থাক। তাজা ও সাদা ফুল রাখুন, সঙ্গে সবুজ পাতার সজীবতা। রজনীগন্ধা কিংবা দোলনচাঁপায় প্রাকৃতিকভাবেই সুবাসিত করতে পারেন ঘর। সাদা বা গোলাপি কারনেশনও রাখতে পারেন। অন্দরের উপযোগী গাছ রাখতে পারেন। খোলা বারান্দা থাকলে সেখানেও গাছ লাগাতে পারেন। বারান্দায় হাসনাহেনার গাছ লাগালেও অন্দর হবে সুমিষ্ট ঘ্রাণে ভরপুর। মিষ্টি ঘ্রাণের অন্য কোনো ফুলের গাছও লাগাতে পারেন।
বাহুল্য আসবাবে নয়
শোবার ঘরে কেবল প্রয়োজনের আসবাবগুলোই রাখুন। তবে আরামের জন্য ডিভান কিংবা দুজন বসার উপযোগী একখানা আরামদায়ক সোফা রাখতে পারেন। আসবাবের ধারগুলো চোখা না হলেই ভালো। মসৃণ ও ঢেউখেলানো ধার রয়েছে, এমন আসবাব বেছে নিন।
শব্দে শান্তির খোঁজ
সাউন্ড সিস্টেমের সাহায্যে মিষ্টি শব্দরাশিতে ভরিয়ে তুলতে পারেন আপনার অন্দর। ধরা যাক, প্রাকৃতিক স্রোতোধারার হালকা একটা শব্দ আপনার ভালো লাগে। এমন শব্দ দিয়েই ঘরে সৃষ্টি করা যায় এক মায়াময় আবেশ। তবে এই শব্দ যাতে ঘণ্টা দু-একের ভেতর আপনা–আপনি বন্ধ হয়ে যায়, সেই ব্যবস্থাও রাখুন। এটুকুর বাইরে শোবার ঘরে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এমনকি টেলিভিশনও রাখবেন না।
আলোকসজ্জা
বই পড়ার জন্য বিছানার পাশে একটি ল্যাম্পশেড রাখলে ঘরে তৈরি হয় আরামদায়ক আবহ। চাইলে ছাদ থেকে টেনে নামানো যায় এমন ল্যাম্পশেডও ব্যবহার করতে পারেন, যার উজ্জ্বলতা আবার রিমোট কন্ট্রোল দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার কাছেও আলোর আলাদা উৎস রাখা যেতে পারে। এতে পুরো ঘর আলোকিত করার ঝামেলা ছাড়াই প্রয়োজনীয় জায়গায় সঠিক আলো পাওয়া যায়, আর অন্দরের প্রশান্তিও অটুট থাকে।
তবে কখনো পুরো ঘর আলোকিত করার দরকার হতে পারে। সে জন্য সুন্দর একটি টিউবলাইট ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষ করে ফলস সিলিংয়ের মধ্যে। আর যদি একটু ভিন্ন আভা চান, তবে ঘরের এক কোণে ডিম লাইট আর কিছু ডেকোরেশন পিস রাখলেই তৈরি হবে অনন্য আলো-ছায়ার খেলা, যা ঘরকে দেবে অন্য রকম মায়াবী পরিবেশ।