অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে কার্যক্রমে নিষেজ্ঞাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বড় মিছিলও করেছে তারা। তবে এবার আওয়ামী লীগের এসব কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে বাড়ানো হবে গ্রেপ্তার তৎপরতাও।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) পুলিশ সদরদপ্তরের ‘হল অব প্রাইড’ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সরাসরি জড়িত। অনেক অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। ফ্যাসিস্টদের অপকর্ম, অপপ্রচার, অপরাজনীতি ও ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে গ্রেফতার কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, অধীনস্থ পুলিশ অফিসার ও সদস্যদের পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে। যারা কমান্ড মানতে চায় না বা সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জেলা পর্যায়ে ঘন ঘন কোর কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দ্রুত প্রত্যাহার ও মিথ্যা মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে আরও সক্রিয় করতে হবে এবং জেলার সব বিষয় নখদর্পণে রাখতে হবে।
থানা থেকে লুট হওয়া বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে—পুলিশসহ সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে তরুণ পুলিশ অফিসারদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে। জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সর্বমহলের প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। বাংলাদেশ পুলিশ যেন এমন একটি মানদণ্ড স্থাপন করে, যা দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়—এ লক্ষ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে।
উপদেষ্টা বলেন, “আইনের প্রয়োগ শুধু শক্তি দিয়ে নয়—ন্যায়, নিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী মাঠে আপনারা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নন; বরং জনগণের নিরাপত্তা, আস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতীক।”
সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সিআইএসসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা অংশ নেন। এছাড়া পুলিশ সদরদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।