১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মতানৈক্য, ঐক্য ও সফলতা

আবু নাঈম মু শহীদুল্লাহ্

(গত সংখ্যার পর)

ঐক্য

অনৈক্যের জন্য কোনো পরিশ্রম করতে হয় না, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হতে যেমন পরিশ্রম করতে হয়, তেমনি ঐক্য ধরে রাখতেও প্রয়োজন সতর্কতা ও ধৈর্য।

ঐক্য ও সংহতি মুসলিম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংঘবদ্ধভাবে জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা স্বয়ং। ঈমান গ্রহণের পর ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপনের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে,কারণ এটি ঈমানেরই অপরিহার্য দাবি।

আল-কুরআন সূরা আলে ইমরান ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন :

> وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর রজ্জু (ইসলাম ও কুরআন) দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, এবং পরস্পরে বিভক্ত হয়ো না।

একই সুরার ২০৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ.

তোমরা সেসব লোকদের মতো হয়ো না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দলে- উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

ঈমানদারগণ পরস্পর ভাই ভাই। তাই নিজেদের মধ্যে এমন ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলবে যেন তারা এক দেহ ও এক প্রাণের মতো হয়একজন ব্যথা পেলে অন্যজনও সেই ব্যথা অনুভব করে। এই ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন

اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ.

নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” (সূরা-৪৯ হুজরাত, আয়াত: ১০)

বিশ্বাসী মুমিনদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ سَیَجۡعَلُ لَهُمُ الرَّحۡمٰنُ وُدًّا.

যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকর্ম করে পরম দয়াময় তাদের জন্য (পারস্পরিক ঐক্য-সম্প্রীতি সৃষ্টি করবেন।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৯৬)

মুমিনদের মধ্যে ভালোবাসাময় ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপিত হলেই কেবল সমাজে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সফলতা অর্জন করতে পারে। যদি সম্পর্কের ঘাটতি থাকে, তবে শক্তিসংখ্যায় বেশি হলেও সফলতা অর্জন সম্ভব নয়আর যদি কোনো বিজয় আসে, তবে সম্পর্কের ঘাটতির কারণে তা ব্যাহত হয়ে যায়। আমরা ইসলামী খিলাফত ও মুসলিম শাসনামলের ইতিহাসে এর বাস্তব উদাহরণ দেখতে পাই।

কাজেই যারা একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে সীসা-ঢালা প্রাচীরের মতোযে সম্পর্ক কোনো আঘাতে ভাঙবে না। বরং যে আঘাত করতে আসবে, সে নিজেই ব্যথা পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হবে। এমন সম্পর্ক স্থাপনকারীদেরই আল্লাহ ভালোবাসেন।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন –

اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ صَفًّا کَاَنَّهُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ

আল্লাহ এইসব লোকদের পছন্দ করেন যারা তাঁর রাস্তায় একত্রে লড়াই করে, যেন তারা সীসাঢালা প্রাচীর।” (সুরা-৬১ সফ, আয়াত: ৪)

ঐক্য নষ্ট হওয়ার মূল কারণসমূহ:

১️। দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া:

যখন মুসলমানরা কুরআন ও সুন্নাহর প্রকৃত শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়, তখন তাদের মধ্যে পার্থিব স্বার্থ, ক্ষমতার লোভ ও অহংকার স্থান নেয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেভাবে আমাদের একতার শিক্ষা দিয়েছেন, তা ভুলে গিয়ে আমরা জাতি, বংশ, গোষ্ঠী ও দলীয় পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছি।

২️। হিংসা ও অহংকার:

পরস্পরের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা মুসলমানদের হৃদয় থেকে ভ্রাতৃত্ববোধ মুছে দেয়। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না; বরং তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।”

(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

৩️। দলাদলি ও রাজনৈতিক বিভাজন:

ইসলামী দৃষ্টিতে সব মুসলমান এক উম্মাহর অংশ। কিন্তু আজ আমরা দল-মত, সম্প্রদায় ও স্বার্থের রাজনীতিতে বিভক্ত। একে অপরকে অপমান ও শত্রু মনে করা আমাদের ঐক্যের ভিত্তিকে ধ্বংস করছে।

৪️। পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব:

ভালোবাসা ও আস্থার জায়গায় সন্দেহ ও অবিশ্বাস জায়গা নিচ্ছে। যখন মুসলমানরা একে অপরের প্রতি সদয় হয় না, তখন ঐক্যের বীজ শুকিয়ে যায়।

অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বহু বার সতর্ক করে বলেছেন:

اِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُکُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً ۫, وَّ اَنَا رَبُّکُمۡ فَاعۡبُدُوۡنِ.

নিশ্চিত জেনে রাখো! এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমার ইবাদাত কর। (সূরা-আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)

وَ اِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُکُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً وَّ اَنَا رَبُّکُمۡ فَاتَّقُوۡنِ.

নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমাকে ভয় কর।(সূরা মুমিনুন, আয়াত: ৫২)

وَ مَا کَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً.

আল্লাহর কাছে উম্মত একটিই। আর তা হচ্ছে তাওহীদের উম্মত।”(সূরা ইউনুস, আয়াত:১৯

كَانَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً١۫ فَبَعَثَ اللّٰهُ النَّبِیّٖنَ مُبَشِّرِیْنَ وَ مُنْذِرِیْنَ١۪ وَ اَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِیَحْكُمَ بَیْنَ النَّاسِ فِیْمَا اخْتَلَفُوْا فِیْهِ١ؕ وَ مَا اخْتَلَفَ فِیْهِ اِلَّا الَّذِیْنَ اُوْتُوْهُ مِنْۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَیِّنٰتُ بَغْیًۢا بَیْنَهُمْ١ۚ فَهَدَى اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لِمَا اخْتَلَفُوْا فِیْهِ مِنَ الْحَقِّ بِاِذْنِهٖ١ؕ وَ اللّٰهُ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ

প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল। (তারপর এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকেনি, তাদের মধ্যে মতভেদের সূচনা হয়) তখন আল্লাহ‌ নবী পাঠান। তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য ও বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী। আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়।—(এবং প্রথমে তাদেরকে সত্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হয়নি বলে এ মতভেদগুলো সৃষ্টি হয়েছিল, তা নয়) মতভেদ তারাই করেছিল যাদেরকে সত্যের জ্ঞান দান করা হয়েছিল। তারা সুস্পষ্ট পথনির্দেশ লাভ করার পরও কেবলমাত্র পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিল বলেই সত্য পরিহার করে বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করে। — কাজেই যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ‌ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ দিয়েছেন, যে ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল। আল্লাহ‌ যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন। (আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ২১৩)

ঐক্য পুনরুদ্ধারের উপায়:

১️। কুরআন ও সুন্নাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন:

আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইসলামের নির্দেশনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

২️। ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি:

প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।

৩️। দলাদলি পরিহার করা:

নিজস্ব মত বা সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ না ভেবে ইসলামকেই সর্বোচ্চ স্থানে রাখতে হবে।

৪️। জ্ঞান ও নৈতিকতার চর্চা:

অজ্ঞতা ও স্বার্থপরতা ঐক্যের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই জ্ঞান ও আদর্শের মাধ্যমে ঐক্যের পথে ফিরতে হবে।

পৃথিবীর সকল মুসলমানের রব এক, রাসুল এক তাই সবাই এক উম্মাহ হয়ে এক মিশন ও ভিশন নিয়ে কাজ করতে পারলে, দুনিয়া থেকে অন্যায়, জুলুম ও অবিচার দূর করে আদল (ন্যায়বিচার) প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

প্রতিটি ঈমানদারের লক্ষ্য হওয়া উচিত দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত খলিফার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।

এ লক্ষ্যে কাজ করতে যারা সংঘবদ্ধ হয়েছে, তাদের অভ্যান্তরীন পরিবেশ ঠিক রাখতে সকল স্তরে সকল ফোরামে শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ্যতা প্রয়োজন। আর এর জন্য দায়িত্বশীলগনকে জনশক্তির মন জয় করে নিতে হবে। অভ্যান্তরীন পরিবেশ যত শক্ত সংগঠন তত পোক্ত।

মনে রাখতে হবে, “মানুষের মন জয় করতে শক্তি নয়, প্রয়োজন ক্ষমা, উদারতা, সুন্দর ব্যবহার আর ভালোবাসার ছোঁয়া।”

সাংগঠনিক ঐক্য মজবুত রাখতে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরী :

১। দায়িত্বশীল হবেন উদার ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল-

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন :

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنْتَ لَهُمْ١ۚ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ١۪ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ١ۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّٰهِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِیْنَ

(হে নবী!) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল। নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো। তাদের ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করো এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করো। তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমার স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো। আল্লাহ‌ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে।(আলে-ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

২। সকল স্তরে আনুগত্য শৃঙ্খলা বজায় রাখা

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন :

وَ اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ لَا تَنَازَعُوۡا فَتَفۡشَلُوۡا وَ تَذۡهَبَ رِیۡحُکُمۡ وَ اصۡبِرُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿ۚ۴۶

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। পরস্পর বিবাদ করো না, তাহলে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আনফাল, আয়াত-৪৬ )

৩। কাউকে উপহাস, নিন্দা বা মন্দ জ্ঞান করা যাবে না-

এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সুরা হুজুরাতের ১০-১৩ নং আয়াতে বলেন-

اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ﴿۱۰

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا یَسۡخَرۡ قَوۡمٌ مِّنۡ قَوۡمٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا خَیۡرًا مِّنۡهُمۡ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنۡ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُنَّ خَیۡرًا مِّنۡهُنَّ ۚ وَ لَا تَلۡمِزُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ لَا تَنَابَزُوۡا بِالۡاَلۡقَابِ ؕ بِئۡسَ الِاسۡمُ الۡفُسُوۡقُ بَعۡدَ الۡاِیۡمَانِ ۚ وَ مَنۡ لَّمۡ یَتُبۡ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۱۱

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۲

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ ﴿۱۳

মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দাও। আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও। হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে। সে তার চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী ও যেন অপর নারীকে উপহাস না করে। সে তার চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না এবং একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ঈমানের পর ফিসকের নাম যুক্ত হওয়া কত না মন্দ! যারা এসব থেকে বিরত হবে না তারাই জালিম। হে মুমিনগণ! অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাকো কেননা কোনো কোনো অনুমান পাপ। তোমরা কারো গোপন ত্রুটি অনসন্ধান করবে না এবং একে অন্যের গীবত করবে না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোস্ত খেতে পছন্দ করবে? এটাতো তোমরা ঘৃণা করে থাকো। আল্লাহকে ভয় কর নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী,পরম দয়ালু। আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে এবং তোমাদের মাঝে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্র বানিয়েছি। যাতে একে অন্যকে চিনতে পারো। নিশ্চিত জেনো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।”

ইসলামী ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু তাওহীদ, উম্মাহর জাতীয়তা ইসলাম, আর মর্যাদার মাপকাঠি তাকওয়া ও ইখলাস।

৪। কু ধারনা থেকে বেঁচে থাকা

রসূলুল্লাহ (স.) বলেন:

قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَأْثُرُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ وَلاَ تَجَسَّسُوا وَلاَ تَحَسَّسُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَكُونُوا عبادَ الله إِخْوَانًا.

তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ ধারণা হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। তোমরা আঁড় পেতো না, গোপন দোষ অন্বেষণ করো না, স্বার্থের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না, হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না, পরস্পর কথাবার্তা বন্ধ করো না, একে অপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ো না, দাম-দরে প্রতারণা করো না এবং নিজের ভাইয়ের বিক্রয়ের মাঝে ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করো না। হে আল্লাহর বান্দারা। আল্লাহ যেমন আদেশ করেছেন, তেমনি সবাই তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও । (বুখারী ৫১৪০, ৬০৪৪, ৬০৬৫)

عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الْأَسْلَمِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ، وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيمَانُ قَلْبَهُ، لَا تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ، وَلَا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعُ اللَّهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ.

ওহে যারা মুখে মুখে ঈমান এনেছো, কিন্তু ঈমান তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি তারা শোনো, মুসলমানের গীবত করো না এবং তাদের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করো না। কারণ যে তাদেও দোষ খুঁজবে স্বয়ং আল্লাহ তার দোষ খুঁজবেন। আর আল্লাহ যার দোষ খুঁজবেন তাকে তার নিজের ঘরে লাঞ্ছিত করবেন।” (মুসনাদে আহমদ ১৯৭৭ সুনানে আবু দাউদ ৪৮৮০)

৫। হিংসা বিদ্বেষ ও পদ পাওয়ার চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা –

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন- রসূলুল্লাহ (স.) আমাকে বলেছেন, হে আমার প্রিয় সন্তান। যদি তোমার পক্ষে সম্ভবপর হয় যে, তুমি এভাবে দিন রাত অতিবাহিত করবে যে, তোমার অন্তরে কারো জন্য কোনো হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না তবে তাই করো। তিনি আমাকে আরো বললেন, হে আমার প্রিয় সন্তান। এটাই আমার সুন্নাত, যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসলো সে আমাকেই ভালোবাসলো যে আমাকে ভালোবাসলো সে জান্নাতে আমার সাথেই থাকবে। (সহীহ মুসলিম: ২৭২৬)

লেখক :সভাপতি, পর্তুগাল মুসলিম কমিউনিটি ( CRCIPT)

চলবে…

মতানৈক্য, ঐক্য ও সফলতা (প্রথম পর্ব)

মতানৈক্য, ঐক্য ও সফলতা (দ্বিতীয় পর্ব)