২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সরকারি হাসপাতাল নিয়ে আস্থার সংকট কীভাবে কাটবে

মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাসেবার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ রকম হাসপাতালগুলোয় দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্প খরচে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, যা লাখো জীবন বাঁচায়। অন্যদিকে চিকিৎসকের অপ্রতুলতা, হাসপাতালের ‘অপরিচ্ছন্ন’ পরিবেশ ও রোগীর প্রতি অবহেলার অভিযোগ কম নয়।

এ রকম পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাব্যবস্থায় একটি নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলা প্রয়োজন। এর ভিত্তি হবে রোগীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা।

এ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় একটু খেয়াল করলে টের পাওয়া যায়, এখানে দুটি সমান্তরাল সংস্কৃতি বিদ্যমান। এর এক পক্ষে থাকেন রোগী ও তাঁর স্বজনেরা, অন্য পক্ষে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা। রোগ নিরাময় ও সুস্থতার প্রশ্নে এখানে ‘আমরা’ বা ‘আমাদের’ অর্থময়তাটি কাজ করে না; বরং এখানে কাজ করে ‘আমরা’ ও ‘তোমরা’ বা ‘তারা’ বোধটি।

এর ফলে হাসপাতালে গেলে রোগী ও তাঁর স্বজনেরা রোগ বা সমস্যাটি কেবল ‘তাঁদেরই’ মনে করেন। অন্যদিকে চিকিৎসাসেবাকর্মীরাও কেবলই তাঁদের পেশাগত দায়িত্বের মধ্যেই নিজেদের আটকে রাখতে চান। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের কথা, আচরণ ও মিথস্ক্রিয়ায় থাকে না মানবিকতা, সহানুভূতি বোধ ও মানবিক সংযোগের চেষ্টা।

অথচ একজন রোগী যখন হাসপাতালে আসেন, তখন তিনি কেবল একজন অসুস্থ ব্যক্তি নন, তিনি একজন মানুষ। তাঁর শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি মানসিক অবস্থা, উদ্বেগ ও ভয়কেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের এই মানবিক দিক সম্পর্কে আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন।

রোগীকে শুধু চিকিৎসা দেওয়ার ‘বস্তু’ হিসেবে না দেখে বরং তাঁর কথা শোনা, তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ও তাঁর ভয় দূর করার চেষ্টা করাটা জরুরি। হাসপাতালে রোগীরা আশা করেন যে তাঁরা চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় সহানুভূতি ও সম্মান পাবেন। তাঁরা চান, তাঁদের কথা শোনা হবে, সমস্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। ঠিক একইভাবে চিকিৎসকেরা আশা করেন, রোগীরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। তাঁদের নির্দেশাবলি মেনে চলবেন। তাঁরা চান যে তাঁদের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ বা আক্রমণ না করা হোক। কিন্তু এ জন্য চিকিৎসকদের এমন মানসিকতা দরকার, যেখানে রোগীকে কেবল চিকিৎসার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নয়; বরং একজন মানুষ হিসেবে দেখবেন।

কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা অতিরিক্ত কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ফলে তাঁরা রোগীদের প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারেন না। হাসপাতালের পরিবেশ প্রায়ই অপরিচ্ছন্ন থাকে। রোগীর স্বজনেরা প্রায়ই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেন। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

২.
এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য দরকার রোগীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম চালু করা। হাসপাতালের কর্মীদের জন্য সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ দেওয়া। হাসপাতালের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করা। রোগীদের স্বজনদের জন্য নির্দিষ্ট বসার জায়গা ও অপেক্ষার জন্য স্থান তৈরি করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রোগীর সুরক্ষা অধিকার সনদে বলা আছে, প্রত্যেক রোগীর অধিকার রয়েছে সময়মতো, কার্যকর ও উপযুক্ত সেবা পাওয়া; নিরাপদ পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া মেনে চিকিৎসা পাওয়া; যোগ্য ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে সেবা পাওয়া; নিরাপদ ওষুধ, সরঞ্জাম ও অন্যান্য সামগ্রীর নিরাপদ ও সঠিক ব্যবহার পাওয়া; নিরাপদ ও সুরক্ষিত হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেবা পাওয়া; ব্যক্তিগত মর্যাদা, সম্মান, বৈষম্যহীন আচরণ, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা পাওয়া; স্বাস্থ্য ও রোগ সম্পর্কে তথ্য, শিক্ষা ও সহায়তা পাওয়া; একই সঙ্গে চিকিৎসাসংক্রান্ত সব তথ্যে প্রবেশাধিকার; অভিযোগ বা মতামত জানানোর এবং তার ন্যায্য সমাধান পাওয়া; চিকিৎসায় রোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মতামত ও অংশগ্রহণের সুযোগ।

এ ছাড়া রোগীর অধিকারগুলো হলো নিরাপদ ও উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া; রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা; ইচ্ছানুযায়ী পরীক্ষা ও চিকিৎসায় সম্মতি দেওয়া বা প্রত্যাখ্যান করা; চিকিৎসার বিষয়ে অন্য কোনো চিকিৎসক বা চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান থেকে দ্বিতীয় মতামত নেওয়া; চিকিৎসার রেকর্ড কঠোরভাবে গোপন রাখার অধিকার আছে; চিকিৎসার রেকর্ডের তথ্য প্রকাশের অনুরোধ করার সুযোগ।

অন্যদিকে রোগীরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা, নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়া এবং হাসপাতালের নিয়মকানুন অনুসরণ করা। অনেক সময় দেখা যায়, রোগীর স্বজনেরা হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। চিকিৎসকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধা দেন। এ ধরনের আচরণ শুধু যে চিকিৎসা পরিবেশকে বিঘ্নিত করে, তা নয়, এটি অন্য রোগীদের জন্যও ক্ষতিকর।

৩.

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের হাসপাতালগুলোয় একটি ‘হাসপাতাল পরিবেশ মডেল’ চালু করার কথা ভাবা যেতে পারে। এই মডেলের মূল ভিত্তি হবে পারস্পরিক ‘সম্মান’। আর এর উপাদানগুলো হবে সম্মান, যোগাযোগ, সহানুভূতি, সহযোগিতা, সক্রিয় অংশগ্রহণ, জবাবদিহি ও নিরাপত্তা।

প্রথমেই একটি আদর্শ হাসপাতাল পরিবেশের প্রশ্নে চিকিৎসক, নার্স, রোগী ও রোগীর স্বজন—সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে স্পষ্ট ও কার্যকর যোগাযোগ। হাসপাতালের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে দেয়াল, টয়লেট, বেড, ওষুধের দোকান, চিকিৎসক ও নার্স—প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সাইনবোর্ডে স্থানীয় ও সহজ ভাষায় অধিকার ও দায়িত্ব লিখতে হবে। এ ছাড়া টিভি স্ক্রিনে স্বাস্থ্য অধিকারের কার্টুন দেখানো যেতে পারে।

রোগী ও তাঁদের স্বজনদের নিয়মিতভাবে চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। সেবাকর্মীদের চেষ্টা করতে হবে রোগীর কষ্টকে বোঝা ও তাঁদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো। রোগী, চিকিৎসক ও সেবাকারীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া রোগী ও কর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।

শয্যা না পেয়ে রোগীরা জায়গা নিয়েছেন ওয়ার্ডের মেঝেতে। সেখানে নেই ফ্যান। গরমে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও তাঁর স্বজনেরা। নেই চলাচলের রাস্তাও। জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড।

শয্যা না পেয়ে রোগীরা জায়গা নিয়েছেন ওয়ার্ডের মেঝেতে। সেখানে নেই ফ্যান। গরমে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও তাঁর স্বজনেরা। নেই চলাচলের রাস্তাও। জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড।ফাইল ছবি

হাসপাতালের উচিত হবে রোগীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও চাহিদা মেটানো। যেমন এ দেশের হাসপাতালগুলো চিকিৎসা চলাকালে রোগীর সেবা ও যত্নে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে পারে না। সম্পৃক্ত হতে হয় পরিবারের লোকজন ও স্বজনদের। সেবার অতিরিক্ত চাপে অনেক সময় স্বজনেরাও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আমাদের হাসপাতালগুলো নির্মাণ করা হয়েছে কেবলই রোগীর বিষয়টি মাথায় রেখে। সেবাকারী স্বজনের প্রয়োজন ও চাহিদা বিবেচনায় রাখা হয় না। ফলে তাঁদের থাকা–খাওয়া ও অন্যান্য দরকার মেটানোর কোনো ব্যবস্থাই থাকে না। থাকে না প্রার্থনা কিংবা নামাজের সুযোগ। অথচ একটি মানবিক হাসপাতালের প্রশ্নে রোগীর যৌথ ব্যবস্থাপনার সুযোগ থাকা উচিত।

আর স্বাস্থ্যকর্মীদের উচিত হবে মানসিক চাপের সময়েও ভদ্র আচরণ নিশ্চিত করা। অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রশ্নে মাসিক ‘রোগী-চিকিৎসক ডায়ালগ সেশন’ আয়োজন করা যেতে পারে। পরিচর্যাকারীদের জন্য সপ্তাহে এক ঘণ্টা ফ্রি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য অভিযোগ বাক্স ও ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন চালু করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রতি মাসে স্বচ্ছতা রিপোর্ট প্রকাশ করা যেতে পারে।

প্রতিটি হাসপাতালে ‘অধিকার চার্টার’ টাঙানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। পরিচর্যাকারীদের জন্য বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যবিধি প্রশিক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া হাসপাতালের কর্মীদের জন্য নিয়মিত সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁরা শিখবেন কীভাবে রোগীর সঙ্গে আরও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হয়, কীভাবে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে হয় এবং কীভাবে মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়।

সামগ্রিকভাবে রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও রোগীর স্বজন—সবার প্রতি পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি হাসপাতালে রোগীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে একটি লিখিত সনদ থাকা উচিত। রোগী ও তাঁদের স্বজনদের কাছে তুলে ধরা হবে। এ সনদে চিকিৎসার ধরন, ঝুঁকি ও বিকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকবে। এটি রোগীকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

প্রতিটি হাসপাতালে ‘অধিকার চার্টার’ টাঙানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। পরিচর্যাকারীদের জন্য বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যবিধি প্রশিক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া হাসপাতালের কর্মীদের জন্য নিয়মিত সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁরা শিখবেন কীভাবে রোগীর সঙ্গে আরও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হয়, কীভাবে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে হয় এবং কীভাবে মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়। একই সঙ্গে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার উচিত কর্মীদের কাজের চাপ কমানোর চেষ্টা করা, যাতে তাঁরা রোগীদের প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারেন।

৪.

আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য শুধু উন্নত চিকিৎসা অবকাঠামো যথেষ্ট নয়; বরং মানবিকতা ও শ্রদ্ধাবোধও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে যদি আমরা সত্যিকারের সুস্থতার কেন্দ্রে পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। রোগীর অধিকার ও দায়িত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা একটি এমন চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি, যা শুধু রোগ নিরাময় করবে না; বরং মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকেও ফিরিয়ে আনবে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে রোগীর অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা এখন সময়ের দাবি। চিকিৎসকের কাছে একজন রোগী কেবল একটি কেস নয়; বরং একজন ব্যক্তি, যাঁর মর্যাদা ও অধিকার সবার আগে। হাসপাতালগুলোয় প্রায়ই দেখা যায়, রোগীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাঁদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে রোগীর মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার বিষয়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেন না।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একটি সুচিন্তিত আইনি ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রয়োজন। একটি বিস্তারিত ‘রোগীর অধিকার বিল’ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। এই বিল রোগীর ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা, চিকিৎসা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা এবং যেকোনো অভিযোগ দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিষ্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করবে।

৫.

শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন হাসপাতাল ও গণমাধ্যমকে সম্মিলিতভাবে রোগীর অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। লিফলেট, পোস্টার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজ ভাষায় এ অধিকারগুলো তুলে ধরা যেতে পারে। একই সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তাঁরা রোগীর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারেন। রোগীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও তাঁদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উন্নত স্বাস্থ্যসেবার একটি অপরিহার্য অংশ।

রোগীর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে হাসপাতালগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে একটি ‘রোগী সহায়তা ডেস্ক’ থাকা উচিত, যেখানে রোগীরা তাঁদের অধিকার-সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারেন এবং অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ছাড়া চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর আলোচনার সময় পর্যাপ্ত গোপনীয়তা নিশ্চিত করা এবং কোনো চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীর কাছ থেকে লিখিত ও অবহিত সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এ পদক্ষেপগুলো কেবল রোগীর অধিকারই রক্ষা করবে না; বরং স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনতেও সহায়তা করবে, যা সবার জন্য উন্নত ও মানবিক স্বাস্থ্যসেবার ভিত্তি স্থাপন করবে।

চূড়ান্ত বিচারে হাসপাতাল শুধু ইট-পাথরের ভবন নয়, এটা আমাদের সভ্যতার আয়না। একজন রোগী, একজন পরিচর্যাকারী, একজন চিকিৎসক, একজন নার্স—সবাই স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রকৃত স্থপতি। সরকারি হাসপাতাল শুধু চিকিৎসার স্থান নয়, এটি নাগরিক সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র। এ ক্ষেত্রে জরুরি হলো অধিকারগুলো সম্পর্কে জানা।

লেখক : জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগবিশেষজ্ঞ, সিনিয়র লেকচারার, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)