আবু নাঈম মু শহীদুল্লাহ্
(গত সংখ্যার পর)
সফলতা :
সফলতা এমন একটি শব্দ, যা মানুষের জীবনের স্বপ্ন, পরিশ্রম ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। জীবনে প্রত্যেক মানুষই সফল হতে চায়। কিন্তু সফলতা এমনি এমনি ধরা দেয় না, বরং তা অর্জন করতে হয় কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।
সফলতার অর্থ:
সফলতা বা কৃতকার্যতা বলতে বোঝায় এমন একটি ফলাফল, যেখানে কেউ তার নির্ধারিত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বা স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়। সহজভাবে বলা যায় — কোনো কাজ বা প্রচেষ্টার শেষে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করাই সফলতা। যেমন, একজন শিক্ষার্থী যদি কঠোর পরিশ্রম করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে, তবে সেটিই তার সফলতা। অর্থাৎ, লক্ষ্য অর্জনই প্রকৃত সফলতা।
সফল হতে হলে প্রয়োজন সুস্পষ্ট লক্ষ্য, আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায় ও সঠিক পরিকল্পনা। যে ব্যক্তি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিজের সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগায়, সে-ই সফলতার পথে অগ্রসর হয়। সফল মানুষ ব্যর্থতাকে ভয় পায় না; বরং ব্যর্থতাকে শিক্ষার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা ধৈর্য ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে প্রতিকূল পরিবেশেও নিজের জ্ঞান ও দক্ষতার আলোকে এগিয়ে যায়।
সফলতার পথে নানা বাধা-বিপত্তি আসবেই। আলস্য, ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব, পরিকল্পনার ঘাটতি — এসবই সফলতার প্রধান শত্রু। যারা এই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে জয় করতে পারে, তারাই সত্যিকারের সফলতার আসনে আসীন হয়।
সফলতা কোনো একদিনের অর্জন নয়; এটি ধারাবাহিক পরিশ্রম ও দৃঢ় মানসিকতার ফল। জীবনে সফল হতে হলে লক্ষ্য স্থির করতে হবে, সময়ের মূল্য দিতে হবে, এবং প্রতিটি কাজে নিষ্ঠা ও সততার পরিচয় দিতে হবে। যে ব্যক্তি নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যায়, সে-ই প্রকৃত সফল মানুষ।
এখন কথা হচ্ছে—একজন মানুষ যখন তার লক্ষ্য অর্জন করে, তখনই তাকে সফল বলা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের লক্ষ্য কী?
আমরা আসলে কী অর্জন করতে চাই?
এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমরা কখনো গভীরভাবে ভাবিনি। প্রায় সকলেই দুনিয়াতে সফল হওয়ার লক্ষ্য স্থির করে এবং সেই লক্ষ্যেই কাজ করে। অথচ দুনিয়ার জীবন তো খুবই ক্ষণস্থায়ী—একটি সাময়িক পর্ব মাত্র। কিন্তু অনন্তকালের জীবনের জন্য আমরা কোনো লক্ষ্য স্থির করি না, সেই সফলতার জন্য চেষ্টা করি না।
আমি এখানে “সফলতা” শব্দটি ব্যবহার করেছি একটি বিশেষ তাৎপর্যে। সেটি ব্যাখ্যা করার আগে দুটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই—
১। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর সফলতা।
২। ইসলামী আন্দোলনের সফলতা।
আমার আলোচনার মূল বিষয় ছিল—ইসলামী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে উদ্ভূত মতানৈক্যসমূহআলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে যখন কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তখন সে সিদ্ধান্তের উপর ঐকমত্য বজায় রেখে, ইসলামী কল্যাণভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা কাজ করে—তারাদের সফলত।
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর সফলতা :
মানুষের মধ্য থেকে যারা ঈমান গ্রহন করার পর ঈমানের দাবী পুরনে প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যায় তারাই মুলত ইসলামী আন্দোলনের কর্মী। ইসালামী সংগঠন সমুহের নিজস্ব কিছু শর্ত রয়েছে যা পুরনের মাধ্যমে কর্মী হতে হয়। তবে সকলের লক্ষ্য একটাই – যে মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়াতে সকল কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রেখে জীবন পরিচালনা করা। যাতে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রকৃত সফলতা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ١ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ١ؕ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ١ؕ وَ مَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে। একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর এ দুনিয়াটা তো নিছক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। (আলে-ইমরান ১৮৫)
আর এই সফলতা অর্জন করতে হলে কিছু মূলনীতি অবলম্বন জরুরি:
১️। আন্তরিকতা (ইখলাস)
সব কাজের উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি হওয়া চাই। কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ, পদ-পদবী বা খ্যাতির লালসা যেন না থাকে।
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ “তোমাদের কাজ আল্লাহর জন্য খাঁটি হলে তবেই তা গ্রহণযোগ্য।” — (সহিহ মুসলিম)
২️। ইলম ও সচেতনতা
কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী আন্দোলনের দর্শন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। সময়, সমাজ ও রাজনীতির প্রেক্ষাপট বুঝে কাজ করা।
৩️। আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরী করা
আত্মশুদ্ধি ছাড়া ইসলামী আন্দোলনে সফল হওয়া কঠিন তাই নিজেকে পরিশুদ্ধ করা জরুরী। ফরজ ওয়াজিব, তিলাওয়াত ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরী করা।
৪️। সংগঠন ও শৃঙ্খলা
সংগঠনের নিয়ম-কানুন মেনে চলা, নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা। ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয়, ইসলামকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
৫️। তাগুতের বিরোধিতা ও সত্যের পক্ষে দৃঢ়তা
অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, ইসলামবিরোধী শক্তির মোকাবেলায় সাহসী হওয়া। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা সত্যকে সত্য বলে বলবে, আর মিথ্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।” — (হাদীস)
৬️। ধৈর্য ও ত্যাগ
ইসলামী আন্দোলনের পথ কণ্টকাকীর্ণ। এ আন্দোলনে নির্যাতন, উপহাস ও জুলুম অবশ্যাম্ভাবী। তাই হাজারো কষ্টের মাঝেও ধৈর্য ধারণ করতে হবে। “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গী।” — (সূরা বাকারা, ২:১৫৩)
৭। দাওয়াত ও সামাজিক কাজ
মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করা। সমাজে ন্যায়, শিক্ষা, নৈতিকতা ও সেবার মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধ প্রচার করা।
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর সফলতা সংখ্যা, জনপ্রিয়তা বা রাজনৈতিক ক্ষমতায় নয়; বরং সে কতটা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেছে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে নিজেকে কতটুকু সম্পৃক্ত রেখেছে, সেটাই মুখ্য।
ইসলামী আন্দোলনের সফলতা :
ইসলামী আন্দোলনের সূচনা হয়েছে সৃষ্টি যার নিয়ম চলবে তার,এ চিন্তা নিয়ে।এটা মানুষের তৈরী চিন্ত নয় স্বয়ং আল্লাহর নির্দেশ :-সুরা ইউসুফ : ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ, إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ— “বিধান কেবল আল্লাহরই”।
সমাজ আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ তার খলিফা বা প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন তিনি বলেছেন, اِنِّیْ جَاعِلٌ فِی الْاَرْضِ خَلِیْفَةً “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই।” (সূরা বাকারা : ৩০)।
তারা আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ থেকে শিরক দুর করে একটি সুন্দর শান্তিময় পরিচ্ছন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে। আর সে লক্ষ্যে যে আন্দোলন কাজ করে চলছে তার সফলতা শুধু ই ক্ষমতা প্রাপ্তি নয়।
ইসলামী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত নিয়ম অনুযায়ী সমাজ পরিচালনা করা। আর এর জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন— সমাজের মানুষ ও সমাজব্যবস্থাকে ইসলামী নৈতিকতার আদর্শে গড়ে তোলা।
শুধুমাত্র নির্বাচনে জয়লাভ, জনপ্রিয়তা অর্জন বা রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ— ইসলামী আন্দোলনের সফলতার মাপকাঠি নয়। বরং ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র— প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশিত বিধান কার্যকর থাকা-ই ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃত সফলতা।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি পৃথিবীর সেরা গাড়ি কোম্পানি থেকে একটি আধুনিক গাড়ি ক্রয় করেন, কিন্তু সেটিকে কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী না চালিয়ে নিজের ইচ্ছামতো চালাতে চান— তাহলে কি গাড়িটি সঠিকভাবে সার্ভিস দেবে? না! বরং সেটি আপনার জন্য ঝামেলা ও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ঠিক তেমনি, মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। তাই মানুষের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রেও আল্লাহর বিধান মেনে চললেই কেবল পেরেশানিমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত বিষয়ে সঠিক ধারণা প্রদান করে এবং কুরআনের নীতিমালা অনুসারে সমাজ পরিচালনা করলে— সমাজের মানুষ শান্তি, ন্যায় ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করতে পারবে। যেমনটি ছিল খোলাফায়ে রাশেদীন যুগে, যখন সমাজের প্রতিটি স্তরে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়িত হয়েছিল।
আজকের দুনিয়ায় সেই রকম উল্লেখযোগ্য ইসলামী রাষ্ট্র বা সমাজব্যবস্থা না থাকলেও, তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন দেশে দেশে বহু সংগঠন ও মর্দ্দে মুজাহিদগণ। তারা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর।
ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃত সূচনা হয় ব্যক্তিগত পরিশুদ্ধতা থেকে। যদি সদস্যদের মধ্যে তাকওয়া, সততা ও ইখলাস না থাকে — তবে বাহ্যিক সফলতা অর্থহীন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জেনে রাখো! দেহে একটি টুকরো মাংস আছে; যদি তা ভালো থাকে তবে পুরো দেহ ভালো থাকে, আর যদি তা নষ্ট হয় তবে পুরো দেহ নষ্ট হয়। সেটি হলো হৃদয়।- সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫২
সমাজকে ঢেলে সাজাতে কাজ করছে এমন মানুষদের উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা বলেন, لَهٗ مُعَقِّبٰتٌ مِّنْۢ بَیْنِ یَدَیْهِ وَ مِنْ خَلْفِهٖ یَحْفَظُوْنَهٗ مِنْ اَمْرِ اللّٰهِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُغَیِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتّٰى یُغَیِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ١ؕ وَ اِذَاۤ اَرَادَ اللّٰهُ بِقَوْمٍ سُوْٓءًا فَلَا مَرَدَّ لَهٗ١ۚ وَ مَا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ مِنْ وَّالٍ
তাঁর জন্য সবই সমান। প্রত্যেক ব্যক্তির সামনে ও পেছনে তাঁর নিযুক্ত পাহারাদার লেগে রয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমে তার দেখাশুনা করছে। আসলে আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জাতির অবস্থা বদলান না যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের গুণাবলী বদলে ফেলে। আর আল্লাহ যখন কোন জাতিকে দুর্ভাগ্য কবলিত করার ফায়সালা করে ফেলেন তখন কারো রদ করায় তা রদ হতে পারে না এবং আল্লাহর মোকাবিলায় এমন জাতির কোন সহায় ও সাহায্যকারী হতে পারে না।— সূরা আর-রা‘দ (১৩:১১)
সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে তারা মানুষকে সতর্ক করে, কারণ এটি আল্লাহরই নির্দেশ। আল্লাহ বলেন, كُنْتُمْ خَیْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ تَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ١ؕ وَ لَوْ اٰمَنَ اَهْلُ الْكِتٰبِ لَكَانَ خَیْرًا لَّهُمْ١ؕ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ اَكْثَرُهُمُ الْفٰسِقُوْنَ
এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য। তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো। এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো। যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়; কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান।— সূরা আলে ইমরান (৩:১১০)
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:তোমাদের মধ্যে উত্তম সে-ই, যার আচরণ ও চরিত্র উত্তম।— সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৫৫৯
উত্তম আচরণ ও চরিত্রের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করে যদি সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া যায়, তবে সেটি হবে শক্তিশালী ও স্থায়ী রাষ্ট্রব্যবস্থা। তাদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য বর্ষিত হয়।
আল্লাহ বলেন, اِنَّ الَّذِیْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَیْهِمُ الْمَلٰٓئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِیْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
যারা ঘোষণা করেছে, আল্লাহ আমাদের রব, অতঃপর তার ওপরে দৃঢ় ও স্থির থেকেছে নিশ্চিত তাদের কাছে ফেরেশতারা আসে এবং তাদের বলে, ভীত হয়ো না, দুঃখ করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ শুনে খুশি হও তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।— সূরা ফুসসিলাত (৪১:৩০)
ইসলামী আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদি ও শক্তিশালী হয় তখনই, যখন এর কাজ ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। সাময়িক সফলতার জন্য জনসমর্থন বা ভোট আদায়ের উদ্দেশ্যে মিথ্যা, অপপ্রচার ও নিন্দামূলক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: যে প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।— সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১০১
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَ لَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَ تَكْتُمُوا الْحَقَّ وَ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
মিথ্যার রঙে রাঙিয়ে সত্যকে সন্দেহযুক্ত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করার চেষ্টা করো না। —সূরা আল-বাকারা (২:৪২)
সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত আন্দোলনই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। বাহ্যিক জনপ্রিয়তা নয় — বরং ন্যায়বিচার, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, নৈতিকতা উৎকর্ষ সাধন ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারলে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে, তবেই সেটিই হবে প্রকৃত সফলতা।
লেখক :সভাপতি, পর্তুগাল মুসলিম কমিউনিটি ( CRCIPT)
১ম পর্ব :মতানৈক্য, ঐক্য ও সফলতা
২য় পর্ব :মতানৈক্য, ঐক্য ও সফলতা
৩য় পর্ব :মতানৈক্য, ঐক্য ও সফলতা