সমাজ ও দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে যারা থাকেন, তাঁদের সততা, দূরদর্শিতা ও নৈতিকতার ওপর নির্ভর করে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ভাবমূর্তি ও কার্যক্রম। ইসলাম এমন নেতাদের প্রশংসা করে, যারা দায়িত্বকে আমানত হিসেবে মনে করে এবং ন্যায় ও সুবিচারের সাথে তা পালন করে।
দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় গুণাবলি
১। সততা (Honesty)
নেতৃত্বের মূল ভিত্তি হলো সততা। ব্যবসায়ী সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে এমন হতে হবে যে, তিনি নিজের স্বার্থের চেয়ে সংগঠনের ও সমাজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে আমাদের কাজের দায়িত্বে থাকবে এবং সে আমানত রক্ষা করবে, সে সফল; আর যে প্রতারণা করবে, সে ব্যর্থ।
(সহিহ বুখারি)
২। অমানতদারিতা ও দায়বদ্ধতা (Trustworthiness & Responsibility)
দায়িত্ব একটি আমানত। সংগঠনের সম্পদ, সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা সব কিছু সঠিকভাবে পরিচালনা করা তাঁর কর্তব্য। ব্যক্তিগত লাভের জন্য সংগঠনের ক্ষতি করা কখনোই উচিত নয়।
৩। ন্যায়পরায়ণতা (Justice)
সংগঠনের ভেতরে বড়–ছোট, ধনী–গরিব সবার সঙ্গে সমান আচরণ করতে হবে। কোনো সদস্যকে অবিচার করা বা পক্ষপাতিত্ব করা ইসলামের নীতির পরিপন্থী।
কুরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন, তোমরা আমানত তাদের কাছে পৌঁছে দাও যারা তার যোগ্য; এবং যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার করো, ন্যায়ের সাথে করো। (সূরা আন-নিসা: ৫৮)
৪। দূরদর্শিতা ও জ্ঞান (Wisdom & Knowledge)
একজন নেতাকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে জানতে হয়। ব্যবসার বাজার, অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। অজ্ঞতা বা তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নিলে সংগঠনের ক্ষতি হতে পারে।
৫। সহানুভূতি ও সহযোগিতার মানসিকতা (Empathy & Cooperation)
সংগঠনের সদস্যদের সমস্যা, ক্ষতি বা চাহিদা বোঝার মানসিকতা থাকতে হবে। একজন ভালো নেতা নিজের সদস্যদের পাশে থাকবেন, তাদের উৎসাহ দেবেন ও একতাবদ্ধ রাখবেন।
৬। আল্লাহভীতি (Taqwa)
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো আল্লাহভীতি। একজন সত্যিকারের মুসলিম নেতা সর্বদা মনে রাখবেন, তাঁর প্রতিটি কাজ আল্লাহ দেখছেন। তাই তিনি কোনো অন্যায় বা দুর্নীতির পথে যাবেন না।
দায়িত্বশীলদের করণীয় :
১। সদস্যদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা বজায় রাখা।
২। ন্যায্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও হালাল উপার্জনের প্রচার করা।
৩। দুর্নীতি, মিথ্যা প্রচারণা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।
৪। ব্যবসায়ীদের অধিকার রক্ষা ও সরকার ও সমাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
৫। যুব উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা।
৬। সংগঠনের অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখা।
৭। সামাজিক দায়িত্ব পালন যেমন দান-খয়রাত, গরিব সহায়তা ও ন্যায্য বাণিজ্যের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
একজন ব্যবসায়ী সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তি কেবল নেতৃত্বের আসনে বসা মানুষ নন, তিনি সমাজ, অর্থনীতি ও নৈতিকতার রক্ষকও বটে। তাই তাঁর মধ্যে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আল্লাহভীতি ও মানবিকতা থাকা অপরিহার্য। যদি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব ইসলামি নীতির আলোকে পরিচালিত হয়, তবে সমাজে ন্যায়, শান্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক : প্রেসিডেন্ট, পিবিসিসিআই-চেম্বার অফ কমার্স পর্তুগাল বাংলাদেশ এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং সম্পাদক, ইউরোবাংলা