বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী জাপানি কোম্পানিগুলো, তবে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি—এমন মন্তব্য করেছেন জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজুইকি কাতাওকা।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিবর্তন এলেও জাপানি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেনি, বরং বেড়েছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে বাসস।
কাতাওকা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন—এ ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ঢাকায় জেট্রোর অফিস এখন সবচেয়ে ব্যস্ততম অফিসগুলোর একটি, যা এই আগ্রহের প্রমাণ।
তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বিএসইজেড) জাপানের এনআইসিসিএ কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড নতুন কারখানা ও বন্ডেড গুদাম নির্মাণ করছে। এছাড়া লায়ন কর্পোরেশন স্থানীয় কল্লোল গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে টুথপেস্ট ও সাবান তৈরির কারখানা স্থাপন করছে।
জেট্রোর ২০২৪ সালের এক জরিপের তথ্য উল্লেখ করে কাতাওকা বলেন, বাংলাদেশে থাকা ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ জাপানি কোম্পানি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। এটি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্বিতীয় এবং বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলো এখন শুধু রপ্তানিমুখী নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকেও সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে। উচ্চ আমদানি শুল্ক এড়াতে অনেক প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে।
তবে বিনিয়োগে কিছু বড় চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন কাতাওকা। তার ভাষায়, “সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি, বিশেষ করে কাস্টমস পর্যায়ে।” এছাড়া প্রশাসনিক জটিলতা ও পারমিট পেতে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়েও তিনি উদ্বেগ জানান।
তিনি বলেন, ওয়ার্ক পারমিট ও নিরাপত্তা ছাড়পত্র পেতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লেগে যায়। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়, কারণ পারমিট ছাড়া বিদেশিরা ব্যাংক হিসাব খুলতে বা টাকা তুলতে পারেন না।
তবে কাতাওকা জানান, এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা ছাড়পত্র ব্যবস্থা চালু হয়েছে—২১ দিনের মধ্যে আপত্তি না উঠলে আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদিত হবে।
তিনি বলেন, ব্যবসার সাফল্যের জন্য সরকারের নীতিতে ধারাবাহিকতা থাকা অপরিহার্য। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পাবেন।
কাতাওকা মনে করেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং অর্থনৈতিক নীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে পারে। এভাবে জাপানি কোম্পানিগুলোর আরও বিনিয়োগ আসবে।
তার ভাষায়, “চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানকার অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। তাই জাপানি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।”