২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পর্তুগালে মানবিক অভিবাসন নীতির দাবিতে অভিবাসীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানবিক অভিবাসন নীতির দাবিতে হাজারো অভিবাসী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তাদের মূল দাবি—ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পর্তুগালের বৃহত্তম অভিবাসী সংগঠন ‘সলিডারিটি ইমিগ্রেন্টের’ নেতৃত্বে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর থেকেই বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা তাদের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে উপস্থিত হন।

অভিবাসীদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—বৈধ আবাসিক নথিপত্রের অধিকার, পারিবারিক পুনর্মিলন, অপরাধ না করেও আটক অভিবাসীদের মুক্তি, দীর্ঘদিন ধরে রেসিডেন্ট কার্ড প্রক্রিয়ায় অপেক্ষমাণদের দ্রুত সমাধান, অভিবাসীদের প্রতি সম্মান ও ন্যায়বিচার, এবং ন্যায্য নাগরিকত্ব আবেদনের সুযোগ।

সমাবেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল—অনেক অভিবাসী দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকলেও সেঞ্জেন ইনফরমেশন সিস্টেমে নাম থাকার কারণে হঠাৎ করে দেশ ছাড়ার নোটিশ পাচ্ছেন। অভিযোগ ওঠে, পর্তুগালের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আইমা যথাযথভাবে ইউরোপীয় আইন প্রয়োগ না করে চলমান আবেদন বাতিল করে অভিবাসীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে।

অদিমেরার কৃষি অঞ্চলে কর্মরত বাংলাদেশি অভিবাসীরা সমাবেশে বলেন, কাজের চাপের কারণে আমাদের প্রায়ই ছুটি ছাড়া টানা দুই সপ্তাহ কাজ করতে হয়। গ্রীষ্মে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও আমরা দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু সরকার আমাদের কষ্টের দিকটি দেখছে না। এখন আবার অন্যায়ভাবে দেশ ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে। আমরা আপিল করেছি, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।

সলিডারিটি ইমিগ্রান্তের প্রধান টিমোটেও মাসেডো সমাবেশে বলেন, অভিবাসীরা পর্তুগালের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি। অথচ তাদের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনের পর দিন সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন দেওয়া সত্ত্বেও অভিবাসীরা বসবাসের অনুমতি পাচ্ছেন না, পারিবারিক পুনর্মিলন বন্ধ রাখা হয়েছে, এমনকি নতুন আইন করে পরিবার থেকে আলাদা করার অমানবিক প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে জাতি ও বর্ণভিত্তিক বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে, যা পর্তুগিজ সংবিধানের পরিপন্থী। তিনি দাবি জানান—বর্তমান অভিবাসন আইন যেমন রয়েছে, সেটি কমপক্ষে পাঁচ বছর অপরিবর্তিত রাখতে হবে এবং অভিবাসীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

সম্প্রতি অভিবাসন ও নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তনের খসড়া প্রকাশ এবং দীর্ঘদিন অপেক্ষারত অভিবাসীদের আবাসন অনুমোদনপত্র না দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ প্রতিবাদের সূচনা হয়। আয়োজকরা ঘোষণা দেন—সরকার তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।