১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নামাজ পড়ায় গোমূত্র ছিটিয়ে দুর্গ ‘পবিত্র’ করলেন বিজেপি এমপি; বিতর্কের ঝড়

ভারতের পুনে শহরের ঐতিহ্যবাহী মারাঠা দুর্গ ‘শনিবার ওয়াড়া’-তে কয়েকজন নারী নামাজ আদায় করছেন— এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনজন নারী একটি চাদর বিছিয়ে সেখানে নামাজ পড়ছেন। ঘটনাটি সামনে আসার পর, ওই স্থান গোমূত্র ছিটিয়ে ‘পবিত্র’ করেন বিজেপি সংসদ সদস্য মেধা কুলকার্নি।

এ ঘটনার পর দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

মেধা কুলকার্নির এক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি কয়েকটি হিন্দু সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নারীদের নামাজ পড়ার স্থানটি ‘পবিত্র’ করার জন্য গোমূত্র দিয়ে পরিষ্কার করছেন এবং শিববন্দনা করছেন।

কুলকার্নি জানান, পুনের ঐতিহাসিক মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতীক এই দুর্গে নারীদের নামাজ পড়া প্রত্যেক পুনেবাসীর মধ্যে ‘উদ্বেগ ও ক্ষোভের’ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মেধা কুলকার্নি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। শনিবার ওয়াড়া নামাজ পড়ার জায়গা নয়। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা শনিবার ওয়াড়ায় শিববন্দনা করেছি এবং স্থানটি শুদ্ধ করেছি। গেরুয়া পতাকা উড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কর্মকর্তারা অনুমতি দেননি। এই ধরনের লোকেরা যেকোনো জায়গায় নামাজ পড়তে পারে এবং পরে সেটাকে ওয়াক্ফ সম্পত্তি বলে দাবি করে। এখন হিন্দু সমাজ সম্পূর্ণ সতর্ক হয়ে উঠেছে।

দুর্গে নামাজ পড়ার নিন্দা জানিয়ে নিতেশ রানে বলেন, শনিবার ওয়াড়ার একটি ইতিহাস আছে। এটি সাহসিকতার প্রতীক। শনিবার ওয়াড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে বিজেপিকে ভারতের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদ ধ্বংস করার’ জন্য অভিযুক্ত করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) মুখপাত্র ওয়ারিশ পাঠান।

তিনি বলেন, তারা শুধু বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। জুমার দিনে তিন-চারজন নারী একটি জায়গায় নামাজ পড়েছে, তাতে কী সমস্যা হলো? আমরা তো কখনো আপত্তি করিনি, যখন হিন্দুরা ট্রেনে বা বিমানবন্দরে ‘‘গারবা’’ (নবরাত্রি পালনের আচার) করে। এএসআই স্মৃতিসৌধ সবার জন্য। মাত্র ৩ মিনিটের নামাজে আপনার এত বিরক্তির হলো? কিন্তু সংবিধানের ধারা ২৫ ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার দেয়। তাহলে আপনারা আর কত ঘৃণা ছড়াবেন? আপনাদের মন শুদ্ধ করা উচিত, মনে বিদ্বেষ বাসা বেঁধেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, দুর্গে নামাজ পড়ার ঘটনায় ওই নারীদের বিরুদ্ধে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) এক কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা করা হয়েছে। দুর্গে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশ বলেছে, শনিবার ওয়াড়ার এএসআই স্মৃতিসৌধের ভেতরে ধর্মীয় প্রার্থনা করা হয়েছিল। এএসআই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব। আমরা অবশ্যই নিরাপত্তা দেব, নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি থাকবে না। এএসআইয়ের কম্পাউন্ডের ভেতরে ঢুকতে আমরা কাউকে অনুমতি দিইনি। এএসআইয়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা ব্যবস্থা নেব।