আবদুল হক
প্রগতি মানে কী? প্র মানে প্রকৃষ্ট। প্রকৃষ্ট মানে শ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্ট, উত্তম। তাহলে দাঁড়াল, উৎকর্ষের দিকে গতিই প্রগতি। বিদ্যমান অবস্থা পরিবর্তন করে উন্নত অবস্থার দিকে যাত্রা। এটা যে চায়, এজন্য যে চেষ্টা করে─সে প্রগতিশীল। আশা করি শব্দটির মূল অর্থ পরিষ্কার হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে প্রগতিশীল একটা নষ্ট শব্দ। বলা চলে এটা একটা গালি। কারণ এদেশে যারা নিজেদেরকে প্রগতিশীল বলে পরিচয় দেয়, তারা বাম। উৎকর্ষের দিকে যাবে বলে তারা কেউ চলে গেছে বেঈমানির দিকে, কেউ গোঁড়া হিন্দুত্বের দিকে।
কওমি মাদরাসায় দাওরা পাশ করা আমার এক বন্ধু প্রগতিশীল হয়ে ‘আমার ব্লগে’ আমাকে একদিন বলেছিল, ‘ল্যাঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড’। সে এটা বলেছিল, কারণ আমি পুরাতন শরীয়ায় বিশ্বাসী, ব্যক্তিগতভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে। এমন লোকদেরকে কথিত প্রগতিশীলেরা ‘ছাগু’ বলে গালি দিত। ছাগল থেকে ছাগু। এমন কটাক্ষের কারণ ছাগলের দাড়ি আছে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরও তা আছে। এই মিলের কারণেই ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রই ছাগু।
ভেবে হতভম্ব হয়েছিলাম যে, একজন কওমি পড়ুয়াও কিনা শেষমেশ প্রগতিশীল হয়ে পড়ল। কওমি-প্রগতিশীল!
সেদিনই আমি হীনম্মন্যতা শব্দের অর্থটা প্রকৃষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলাম। দেখেছিলাম, আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগতে ভুগতে কী করে একজন মাওলানা পর্যন্ত নষ্ট প্রগতিশীল হয়ে যায়!
হিদায়াত মহান আল্লাহর এক নিয়ামত। এটা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, যার থেকে ইচ্ছা ছিনিয়ে নেন। তবে এ দান-হরণ এমনি এমনি ঘটে না। ব্যক্তি তার চিন্তা ও কর্মের মাধ্যমে কখনো নিজেকে হিদায়াতের যোগ্য করে তোলে, কখনো করে তোলে অযোগ্য। অপাত্রে কন্যাদান বলে একটা প্রবাদ আছে। মানুষই তো তা করতে চায় না। তাহলে মহাপ্রজ্ঞাবান আল্লাহ কেন অপাত্রে দান করবেন ঈমান ও হিদায়াত!
লেখক, সাহিত্যিক ও সম্পাদক