১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইউরোপে উচ্চশিক্ষা : বিনামূল্যে পড়া যাবে ইতালিতে

বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বললেই সবার আগে মনে পড়ে জার্মানির কথা। দেশটি বিশ্বজুড়ে পরিচিত তাদের টিউশন ফি–বিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য। তবে সেখানে ভর্তি হতে হলে দরকার চমৎকার একাডেমিক ফলাফল ও জার্মান ভাষায় দক্ষতা। পাশাপাশি থাকা–খাওয়া ও দৈনন্দিন খরচের জন্যও লাগে মোটা অঙ্কের অর্থ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—ইতালিতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে এসব বাধা অনেকটাই নেই। এখানে আপনি প্রায় বিনামূল্যেই পড়তে পারেন, এমনকি জীবনযাপনের খরচেও মিলতে পারে সহায়তা।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন অনেক তরুণ-তরুণীর। তবে টিউশন ফি, আবাসন ও জীবনযাপনের ব্যয়—এসব ভাবতে গিয়েই অনেকের স্বপ্ন থেমে যায়। সাধারণভাবে অনেকেই মনে করেন, ইউরোপে বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ কেবল জার্মানিতেই মেলে। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন জার্মানির পাশাপাশি ইতালিও হয়ে উঠছে টিউশন ফি–বিহীন উচ্চশিক্ষার আকর্ষণীয় গন্তব্য।

ইতালিতে বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি খুবই কম রাখে। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোপুরি বিনামূল্যেও পড়ার সুযোগ আছে। মূলত শিক্ষার্থীর পারিবারিক আয়, একাডেমিক ফলাফল ও পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে টিউশন ফি মওকুফ ও বৃত্তির সুযোগ দেওয়া হয়।

বৃত্তির ধরন ও সুযোগ :

ইতালির সরকারি বৃত্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে “রিজিওনাল স্কলারশিপ” বা আঞ্চলিক বৃত্তি। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য এই বৃত্তি আবার আলাদা হয়ে থাকে। যেমন লোম্বার্ডি অঞ্চলে রেজিওনে লোম্বার্ডিয়া, টাস্কানিতে ডিএসইউ তোসকানা, আর লাজিও অঞ্চলে লাজিওডিসকো । এই বৃত্তি পেলে শুধু টিউশন ফি–ই মওকুফ হয় না, বরং প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার ইউরো পর্যন্ত অর্থ সহায়তাও দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্রাবাস, খাবার ও বই কেনার খরচও এর আওতায় পড়ে।

এর পাশাপাশি ইনভেস্ট ইয়োর ট্যালেন্ট ইন ইতালি প্রোগ্রামের মতো জাতীয় পর্যায়ের বৃত্তিও রয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারেন। এই বৃত্তিতে মাসিক ভাতা, সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ, এমনকি ইন্টার্নশিপের সুযোগও থাকে।

যোগ্যতা ও ভর্তি প্রক্রিয়া :

ইতালির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চাইলে প্রথমেই বেছে নিতে হবে পছন্দের প্রোগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয়। বেশিরভাগ কোর্সই ইংরেজিতে পড়ানো হয়। আবেদন করার সময় প্রয়োজন হয় একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, পাসপোর্ট, ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস বা এমওআই) এবং মোটিভেশন লেটার।

বৃত্তির আবেদন সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার পাওয়ার পর করতে হয়। আয়ের প্রমাণ হিসেবে পরিবারের ইনকাম সার্টিফিকেট ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। ইতালির দূতাবাসের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী এই নথিগুলো অনুবাদ ও অ্যাটেস্ট করতে হয়।

খরচ ও জীবনযাপন :

ইতালিতে জীবনযাপনের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। রোম বা মিলানের মতো বড় শহরে মাসে গড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ ইউরো খরচ হয়। আর ছোট শহরগুলোতে ৪০০ ইউরোই যথেষ্ট। অনেক বৃত্তির আওতায় থাকার জায়গা ও খাবারও দেওয়া হয়। ফলে নিজের পকেট থেকে খরচ প্রায় লাগে না বললেই চলে।

কেন ইতালি বেছে নেবেন?

ইতালি শুধু ইতিহাস ও শিল্পের দেশ নয়। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম কেন্দ্র। বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিকো দি মিলানো, রোমা ত্রে বা পিসা, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আন্তর্জাতিক মানের পড়াশোনা হয়। পড়াশোনা শেষে ইউরোপে চাকরি বা গবেষণার সুযোগও অনেক বেড়ে গেছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, বিনা টাকায় বিদেশে পড়ার স্বপ্ন এখন আর কেবল জার্মানিতে সীমাবদ্ধ নয়। ইতালি এখন ইউরোপের সেই নতুন শিক্ষা–গন্তব্য। যেখানে প্রতিভা আর পরিশ্রম থাকলেই টাকা বাধা নয়। তরুণদের জন্য এটি হতে পারে নতুন এক দরজা, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে।